আষাঢ় মাসের সংক্রান্তি লগ্নে শ্রাবণ মাসের প্রারম্ভ। আর শ্রাবণের পদার্পণ হলেই এই মাসে অধিকাংশ মেয়েদের (মায়েরাও) সবুজ বর্ণের কাঁচের চুরি ও সবুজ রঙেরই পোশাক পরিধান করতে লক্ষ করা যায়। তবে সবুজ কালারের কাঁচের চুরি ও পোশাক পরিধান করলেও এই রঙের বস্ত্র ও অলঙ্কার পরিধান করার পেছনে কি কারণ লুকিয়ে আছে, তা কিন্তু অনেকেরই অজানা।
- সবুজ রঙ মহাদেবের পছন্দের রঙ, ভোলানাথের ফেবারিট কালার। কারন, তিনি প্রকৃতির সারাল্য সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। আর প্রকৃতির রঙ সবুজ।
- তাই বলা হয় যে, শ্রাবণ মাসে সবুজ রঙ পরা খুবই শুভ। শিবের পুজোর সময় মহিলারা সবুজ রঙের পোশাক, চুড়ি অবশ্যই পরে পুজো করবেন। মহাদেব প্রসন্ন হন এতে।
- সবুজ ছাড়া লাল, সাদা, হলুদ, নীল ও গেরুয়া রঙের পোশাক পরা যেতে পারে। অবশ্যই সুতির তৈরি কাপড় পরবেন।
- পুরুষদের ক্ষেত্রে সাদা রঙের ধুতি ও পাঞ্জাবী পরে পুজো করার কথা বলা হয়।
বিভিন্ন পুরাণ মতে,পুরাণ অনুযায়ী, শ্রাবণ মাসেই সমুদ্র মন্থন করা হয়েছিল। বিশ্বকে বাঁচাতে মন্থনে উঠে আসা বিষ নিজের গলায় ধারণ করেছিলেন শিব। সেই বিশ্বাসেই আজও হিন্দুরা যে কোনও বিপদ থেকে রক্ষা পেতে মহাদেবেরই শরণাপন্ন হয়। শ্রাবণ মাস কে ভগবান শিবের জন্মমাস হিসেবে উৎসর্গ করা হয়েছে। এই সময় চারিদিক বর্ষার জলে পুষ্ট হয়ে প্রকৃতি হয়ে ওঠে সবুজাভ, শস্য-শ্যামলা। মহাদেব শঙ্করের আরেক নাম পশুপতি। পশুপাখিরা যেহেতু প্রকৃতিতে লালিত-পালিত হয়, তাই পশুদের পাশাপাশি প্রকৃতিও দেবাদিদেবের খুব কাছের, খুব প্রিয়। আর এই প্রকৃতি সতেজ ও পূর্ণ অবস্থায় সর্বদা সবুজ বর্ণ ধারণ করে। এই সবুজ রঙই বিশুদ্ধতা, সতেজতা ও পবিত্রতার প্রতীক। তাই আরাধ্য আশুতোষ (ভগবান শিবের আরেক নাম) কে প্রসন্ন ও তুষ্ট করতে এবং কাঙ্ক্ষিত ফলের আশা না করে স্বামী, সন্তান ও পরিবারের মঙ্গল চেয়ে সবুজ বর্ণের কাঁচের চুরি ও পোশাক পরিধান করেন মেয়েরা।
সবুজ বর্ণ প্রচুর মাত্রায় জীবের মধ্যে পজিটিভ (ধনাত্মক বা ইতিবাচক) এনার্জির প্রতিফলন ঘটাতে সাহায্য করে- এমনটাই মনে করেন বাস্তু বিশেষজ্ঞরা (Astrologer)। তাই মানসিক ভারসাম্যহীনতা বা মানসিক অসুখ-অশান্তি (মন খারাপের পরিস্থিতি) হলে ডাক্তারেরা পাহাড়ে ঘুরে আসতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কেননা পাহাড়ে অধিক মাত্রায় সবুজ পরিবেশ বিরাজ করে যা মনকে শান্ত ও শীতল করে। এমনকি অপারেশন থিয়েটারেও চিকিৎসকেরা সবুজ রঙের পোশাক পরিধান করেন মনকে ধীরজ রাখতে এবং কাজটি যাতে সুসম্পন্ন হয় তার জন্য পজিটিভ শক্তি সঞ্চালনের জন্য।
একমাত্র উদ্দেশ্য ভগবান শিবকে সন্তুষ্ট করে তার প্রিয় হয়ে ওঠা এবং শ্রাবণ মাসের সোমবারে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করলে কঠিন ব্যাধি থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিশ্বাসীরা মনে করেন, ভগবান মহাকাল এর জন্ম মাসে (শ্রাবণ মাসে) আরাধ্য ভগবানের প্রিয় রঙের পোশাক ও অলঙ্কার পরিধান করলে মহাদেবের বর (আশীর্বাদ) পাওয়া যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন