ভাগবত ও পুরাণ পাঠ

ভাগবত ও পুরাণ পাঠ :গৌর গদাধর সম্প্রদায় (সাটুই , মুর্শিদাবাদ)

Breaking

Post Top Ad

২২ জুলাই ২০২৪

শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী

 জন্মাষ্টমী হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিণী লক্ষত্র যোগে কৃষ্ণ মধুরায় কংসের কারাগারে মাতা দেবকীর অষ্টম সন্তান রূপে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর এই জন্মদিনকে জন্মাষ্টমী বলা হয়।

বৈষ্ণবপর্বগুলোর মধ্যে শ্রীকৃষ্ণজন্মাষ্টমী মহামহোৎসব তথা ভূমণ্ডলে শ্রীকৃষ্ণের অবতরণ, সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ লোক এই উৎসবটি উদযাপন করে। এইদিনে  ভক্তগণ শ্রীধাম বৃন্দাবনসহ বিভিন্ন মন্দিরে ভগবানের শ্রীঅর্চাবিগ্রহ দর্শনের জন্য ভীড় জমায়।ভোর সাড়ে চারটায় মঙ্গল আরতির মাধ্যমে শুরু করে মধ্যরাত্রিতে (ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের সময়) আরতির মধ্য দিয়ে তাঁরা দিনব্যাপী বিভিন্ন অমৃতময় অনুষ্ঠানে নিমগ্ন হয়।তিনি বা তাঁর ভক্ত যেখানেই থাকুক না কেন, সেখানেই মন্দির ও তীর্থক্ষেত্র আর যেখানেই আমরা তাঁর আরাধনা করি না কেন তিনি আমাদের সাথে যথাযথভাবে সাড়া দেবেন।

যাইহোক ভগবান তাঁর ভক্তের হৃদয়ে অবস্থান করেন এবং কেউ তার গৃহে মহোৎসব উদ্যাপন করতে পারেন। জন্মাষ্টমীতে সাধারণত শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহকে কেন্দ্র করে পালিত হয়, আর আপনারা অনেকেই বাড়িতে নিজস্ব বিগ্রহ সেবা করেনশ্রীবিগ্রহসেবা আমাদের প্রেমময়ী সেবক এবং প্রভুর ভাবকে জাগ্রত করে ভক্তিমূলক সেবায় উৎসাহ দেয়, শ্রীকৃষ্ণ আমাদেরকে তাঁর সেবা করার সুযোগ দিতে এবং আমাদের কৃষ্ণভাবনায় উন্নতি করার জন্য ও তাঁর সাথে প্রেমময়ী সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হতে বিগ্রহরূপে আবির্ভূত হয়েছেন। 

“বিশেষ করে গৃহস্থ ভক্তদের জন্য অর্চা-বিগ্রহ পূজা করার জন্য পালন করা হয়েছে।যতদূর সম্ভব গৃহস্থের শ্রীগুরুদেবের নির্দেশ শ্রীশ্রীধাকৃষ্ণ, লক্ষ্মী-নারায়ণ অথবা সীতা-রামের, অথবা নৃসিংহ, বরাহ, গৌর-নিতাই, মৎস্য, ‍কূর্ম, শাল বাগ্রাম বিষ্ণুর ত্রিবি, কেশব, অচ্যুত, বাসুদেব, বৈষ্ণব, বৈষ্ণব, দাম পুরাণে অনেক ভগবানের শ্রীবিগ্রহ করে নিষ্ঠা সহকারে অর্চন-বিধি পালন পূর্বক সবারে সেই বিগ্রহ পূজা করা।

সদগুরু নির্দেশনায় এইভাবে ভগবানের অর্চা-বিগ্রহের আরাধনায় যোগসূত্রের ফলে গৃহস্থ ভক্তনায়াসেন হতে চেষ্টা এবং দ্রুত পারমার্থিক উন্নতি সাধন করবে।

উপবাস “বৈদিক শাস্ত্রে নানা রকম বিধি-নিষেধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং যদি কেউ শ্রীকৃষ্ণকে জানতে চায়, তা হলে তাকে শাস্ত্রের এই সমস্ত নির্দেশগুলি মানতে হবে। শাস্ত্রের নির্দেশ অনুসারে কৃচ্ছ্রসাধন করা উচিত। দৃষ্টান্তস্বরূপ, কঠোর কৃ”ছ্রসাধন করতে হলে আমরা শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষ্যে জন্মাষ্টমীতে এবং প্রতি মাসে দুটি একাদশীতে ব্রত-উপবাস পালন করতে পারি।” 

মধ্যরাত্রি পর্যন্ত নির্জলা উপবাস করা উচিত। কিন্তু যদি শারীরিক কারণে উপবাস করা কঠিন হয়ে যায় তবে দিনের বেলা একাদশীর মতো অনুকল্প প্রসাদ গ্রহণ করা যেতে পারে। শ্রীকৃষ্ণ আপনার বিধি-নিয়ম পালনের প্রতি চেষ্টাটা দেখবেন এবং তদনুরূপ আপনার সাথে ভাব বিনিময় করবেন।

হরিনাম জপ ও কীর্তন- হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র আমাদের ভক্তির সার। এটা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে আমাদের অন্তরঙ্গ প্রেম বিনিময়, তাঁকে সš‘ষ্ট করার জন্য তাঁর পাদপদ্মে প্রেমময়ী সেবা। ভগবানের চিন্তায় মগ্ন হয়ে আপনার নির্ধারিত জপসংখ্যার চেয়ে বেশি জপ করার চেষ্টা করুন। গৃহের সকলে মিলে মৃদঙ্গ করতাল বা হাততালি দিয়ে কীর্তন করুন।

অধ্যয়ন- ‘লীলা পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ’ গ্রন্থে বা শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব এবং অন্যান্য চমৎকার লীলাসমূহ আমাদেরকে জানিয়েছেন। জন্মাষ্টমীর দিনে এই সমস্ত লীলা পাঠ, আমাদেরকে ভগবানের লীলামহিমার গভীরে অনুধাবন করতে সাহায্য করবে।

অভিষেক : - আপনি নিম্নলিখিত ৫টি অমৃত ব্যবহার করে গৃহে সহজভাবে অভিষেক করতে পারেন:
দুগ্ধ
২. দধি
৩. ঘি
৪. মধু
৫. চিনি মিশ্রিত জল
অভিষেক করানোর আগে সমস্ত উপকরণ যেন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় থাকে সে বিষয়ে লক্ষ্য
রাখবেন। বিগ্রহগণকে পরে সুন্দর করে গরম জল দিয়ে পরিষ্কার করে শুকানো পোষাক পরানো
উচিত। শিশুদের এই উপাসনায় যুক্ত করা হলে তাদের উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে এবং অর্চন সম্পর্কে
শিক্ষালাভ করবে। 
পুষ্পাভিষেক- শ্রীবিগ্রহকে স্নান করানোর আরেকটি দারুণ পদ্ধতি হলো ফুলের পাপড়ি দিয়ে অভিষেক করানো। বিভিন্ন রকমের এবং রঙের ফুলের পাপড়ি শ্রীবিগ্রহের ওপর ছড়ানো যেতে পারে। পরে প্রসাদি ফুল পরিবারের সদস্যদেরকে তা সম্মান করার জন্য দেওয়া যেতে পারে।
ভোগ রন্ধন-আমরা যেমন নিজেদের জন্মদিনে উৎকৃষ্ট খাদ্যদ্রব্য প্র¯‘ত করি, সেইভাবে ভগবানের জন্যও করা উচিত। তাছাড়া তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ব¯‘টি হলো আপনার প্রেম ও ভক্তি। আপনি বিশেষ যত্ন সহকারে বিভিন্ন সুস্বাদু পদ তৈরি করে মহোৎসব করতে পারেন, যেমনটা আপনি আপনার পরিবারের কোনো প্রিয়জনের জন্য করেন।
ভোগ নিবেদন - ভোগ রন্ধন হয়ে গেলে সকল পদ আলাদা আলাদা পাত্রে নিবেদন করতে হবে এবং একটা থালায় সাজাতে হবে। হস্ত-শুদ্ধির পর শ্রীবিগ্রহকে আচমন নিবেদন করে ভোগের থালা সামনে রাখতে
হবে। তারপর নিম্নোক্ত সরল পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
 ভগবানকে ভোগ গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানান
 বাঁ হাতে ঘণ্টা বাজাতে থাকুন
 শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্র প্রত্যেকটি ৩বার করে জপ করুন।
ভোগ নিবেদনের সময় আমাদের প্রার্থনার বা ভিক্ষা চাওয়ার ভাবে ভগবানকে অনুরোধ করতে হবে যেন তিনি কৃপা করে ভোগ গ্রহণ করেন।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Top Ad

Your Ad Spot