ভাগবত ও পুরাণ পাঠ

ভাগবত ও পুরাণ পাঠ :গৌর গদাধর সম্প্রদায় (সাটুই , মুর্শিদাবাদ)

Breaking

Post Top Ad

১৩ জুলাই ২০২৪

ক্ষৌরকর্ম কখন ও কী কী বারে করা উচিত!

ক্ষৌরকর্ম কখন ও কী কী বারে করা উচিত!


ক্ষৌরকর্ম কী?

চুল কাটা, দাঁড়ি কাটা, নখ কাটা ইত্যাদিকে বলা হয় ক্ষৌরকর্ম। কিন্তু কখন করতে হবে, কী কী বারে করতে হবে, কোন্ মুখী হয়ে করতে হবে তা অনেকেই জানে না। তাই আজকে আমরা প্রথমেই জানতে পারবো যে, কোন্ কোন্ বারে ক্ষৌরকর্ম করলে কী ফল হয়। খনা নামক একজন বিদুষী নারী বলেছেন-

রবৌ দুঃখং সুখং চন্দ্রে মৃত্যু মঙ্গলে বুধে বলম্,
মানহানি গুরোবারে শুক্রে শুক্রক্ষয়ো ভবেৎ,
শনৌ চ সর্বদোষ্যঃ স্যুঃ ক্ষৌরমত্র বিবর্জয়েৎ।

অনুবাদ: রবিবারে ক্ষৌরকর্ম করলে দুঃখ লাভ হয়, সোমবারে সুখলাভ, মঙ্গলবারে আয়ুক্ষয়, বুধবারে বলবৃদ্ধি, বৃহস্পতিবারে মানহানি, শুক্রবারে শুক্রহানি, শনিবারে সকল প্রকার দোষ থাকায় অশুভ ফল লাভ হয়। অতএব সোমবার এবং বুধবার হচ্ছে ক্ষৌরকর্মের জন্য সবচেয়ে ভাল দিন। তাছাড়া শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন যে, একাদশী, দ্বাদশী বা কোন উপবাসের দিনে ক্ষৌরকর্ম করা উচিত নয়। লোকাচারে বলা হয়, বৃহস্পতিবারে ক্ষৌরকর্ম করলে গুরুর আয়ুক্ষয় হয়। তাই এই বারে ক্ষৌরকর্ম করলে তাকে গুরুদ্রোহী বলা হয়। শুক্রবারে ক্ষৌরকর্ম করলে শুক্রহানি/বীর্যহানি ঘটে। দেখা যায় আধুনিক যুগের লোকেরা বেশির ভাগ সময় শুক্রবারেই ক্ষৌরকর্ম করে। যার ফলে বিভিন্ন প্রকার শুক্রহানি তাদের হয়।

আমরা দেখছি সারা পৃথিবীতে কীভাবে বেশ্যাবৃত্তি বেড়ে গেছে। মানুষ কীভাবে বিবাহের পূর্বে অবৈধ কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। কীভাবে নারীরা চরিত্রহীনা হয়ে যাচ্ছে। একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, ৩৫ ভাগ বিবাহিত পুরুষ/মহিলার সন্তান হয় না। কেন সন্তান হয় না? সেটা গবেষণা করে দেখা গেলো, সন্তান না হওয়ার পিছনে ৯০ ভাগ দায়ী হচ্ছে পুরুষেরা। কারণ পুরুষেরা বিবাহের পূর্বে এত বেশি বীর্যক্ষয় করে যেটার ফলে তাদের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এর বড় একটা কারণ হচ্ছে শুক্রবারে ক্ষৌরকর্ম করা। যেহেতু বেশিরভাগ পুরুষেরা শুক্রবারে ক্ষৌরকর্ম করে তাই এসব ঘটে। আবার, শনিবারে ক্ষৌরকর্ম করলে শনিদেবের কুদৃষ্টি পড়ে বসে বলে কথার প্রচলন আছে। তাই উপরের আলোচনা থেকে আমরা দেখি যে, দুইটি দিন আমাদের ক্ষৌরকর্মের জন্য বেশি উপযুক্ত; সোমবার ও বুধবার।

কোন মুখী হয়ে ক্ষৌরকর্ম করা উচিত?

প্রাচীসুখঃ সৌম্যমুখোহপি
ভুতা কুর্য্যাবঃ ক্ষৌরমনুৎ কটস্থ।

অনুবাদ: উত্তর বা পূর্ব মুখী হয়ে বসে ক্ষৌরকর্ম করা উচিত। হাটু গেঁড়ে উবু হয়ে বসে ক্ষৌরকর্ম করা উচিত নয়।

জন্ম-মাসে ক্ষৌরকর্ম করার ফল কী?

যো জন্মমাসে ক্ষৌরকর্ম যাত্রাং।
কর্ণবেধং কুরুবে চ মোহাৎ
নুনং স রোগং ধনপুষ্প নাশং।
প্রাপ্নোতি মূঢ়ো বধ বন্ধনানি ॥

অনুবাদ: জন্মমাসে যে জন ক্ষৌরকর্ম, কর্ণবেধ বা যাত্রা করে নিশ্চয় সেই মূঢ় ব্যক্তির ধনরত্ন ও পুত্রনাশ হয়ে থাকে। তার রোগ লেগেই থাকে।

কৃষ্ণভক্তদের এইসব নিয়ম পালন করার প্রয়োজন আছে কী?

ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, কখনো কখনো কোনো কিছু নির্ধারণ করা নিয়ে অনেক বিবেকবান ব্যাক্তিও বিভ্রান্ত হয়ে যায়। তাই আমার কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয় সেই সম্বন্ধে শাস্ত্রে কী বলা আছে। শাস্ত্রে যেগুলো নিষেধ করা আছে। সেগুলো মেনে চলা উচিত। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বৈষ্ণবদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই ক্ষৌরকর্ম শুভদিন ছাড়া অন্য দিনেও করতে হয়। যেমন- পুজারীদের ক্ষেত্রে বা অন্য কোনো বৈষ্ণবীয় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বৈষ্ণবেরা সোমবার ও বুধবার ছাড়া ক্ষৌরকর্ম করে থাকে। শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন, যারা প্রচারক তাদের অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। যাহাতে তাহার পরিচ্ছন্ন আচরণ ও শুচিতার দ্বারা মানুষ আকৃষ্ট হয়। ভক্তদের লম্বা দাড়ি ও গোফ প্রভুপাদ অনুমোদন করেননি। অনেক সময় দেখা যায়, বিভিন্ন কাজ কর্মের ব্যস্ততার কারণে বা উপবাস বা একাদশীর কারণে সোমবার ও বুধবার ক্ষৌরকর্ম করা যায়নি, সেইক্ষেত্রে কোন বারে ক্ষতি কম সেটা বেছে নিতে হবে। আমরা দেখেছি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারে বেশি সমস্যা। তাই অন্য বারগুলোতে ক্ষৌরকর্ম করা যেতে পারে শ্রীকৃষ্ণের সেবা ও প্রচার করার জন্য। সবচেয়ে ভালো সোমবার ও বুধবার।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Top Ad

Your Ad Spot