সহস্র যুগপর্যন্তমহর্ষদ্ ব্রহ্মণো বিদুঃ।
রাত্রিং যুগসহস্রান্তাং তেহহোরাত্রবিদো জনাঃ ॥
(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৮/১৭)
অর্থাৎ মনুষ্য মানের এক হাজার চতুর্যুগে ব্রহ্মার এক দিন হয় এবং এক হাজার চতুর্যুগে তাঁর এক রাত্রি হয়। তাই ব্রহ্মার একদিনে ২০০০ হাজারটি দিব্যযুগ বা চতুর্যুগ অতিবাহিত হয়। আমাদের হিসাব অনুযায়ী (৪৩,২০,০০০*২০০০) মোট ৮৬৪ কোটি বছরে ব্রহ্মার একদিন। এভাবে ব্রহ্মা একশত বছর জীবিত থাকেন। এই একশত বছর পৃথিবীর গণনা অনুসারে ৩১১,০৪,০০০,০০,০০,০০০ বছরের সমান। সৃষ্ট জীবদের মধ্যে ব্রহ্মার আয়ুই সবচেয়ে দীর্ঘ। বলতে গেলে তা অক্ষয় মনে হয়। কিন্তু নিত্য কালের কাছে এই সময়টি কিছুই নয়। অনন্ত সমুদ্রে তা বুদবুদের মতো প্রতিভাত হয়।
সত্যযুগ | ত্রেতা যুগ | দ্বাপর যুগ | কলি যুগ |
---|---|---|---|
|
|
|
|
ব্রহ্মার আয়ু সম্পর্কে শাস্ত্রে আরও হিসাব পরিলক্ষিত হয়। যথা-
চতুর্দশভিরেতৈস্তু গতৈর্মন্বন্তরৈর্দ্বিজ।সহস্র যুগপর্যন্তঃ কল্পো নিঃশেষ উচ্যতে ॥ (শ্রীবিষ্ণুপুরাণ ৩/২/৪৮)অর্থাৎ, এভাবে চতুর্দশ মন্বন্তরে এক হাজার চতুর্যুগ গত হলে একে এক কল্প বা ব্রহ্মার এক দিবস বলা হয়।তাহলে এক এক জন মনু ৭১ দিব্যযুগের চেয়ে কিছু বেশি পর্যন্ত আয়ুস্কাল উপভোগ করেন। (১০০০/১৪) = ৭১.৪২
স্বং স্বং কালং সনুর্ভুঙ্ক্তে সাধিকাং হ্যেকসপ্ততিতম্। (শ্রীমদ্ভাগবত ৩/১১/২৪)অর্থাৎ — প্রত্যেক মনু একাত্তর চতুর্যুগের কিছু অধিক কাল পর্যন্ত জীবন উপভোগ করেন। হিন্দু কাল গণনায় যুগের এই ক্রমটি চক্রাকারে সম্পন্ন হয়। এভাবে ব্রাহ্ম অহোরাত্র পরিমান চক্র সম্পন্ন হলে মহাপ্রলয় সংগঠিত হয়।
- ১ যুগ = ১,২০০ দৈব বছর = ৪৩,২০,০০০ মানব বছর।
- ১ মন্বন্তর = ৭১ চতুর্যুগ = ৩০৬,৭২০,০০০ মানব বছর।
- ১ কল্প = ১,০০০ চতুর্যুগ = ৪৩২,০০,০০,০০০ মানব বছর।
- ১ ব্রাহ্ম অহোরাত্র = ২ কল্প = ২,০০০ চতুর্যুগ = ৮৬৪,০০,০০,০০০ মানব বছর।
শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থে (আদি ৩/৭-৮) এগুলো খুব সহজ করে বোঝানো হয়েছে,সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি, চারিযুগ জানি।সেই চারি যুগে দিব্য একযুগ মানি ॥একাত্তর চতুর্যুগে এক মন্বন্তর।চৌদ্দ মন্বন্তর ব্রহ্মার দিবস ভিতর ॥
যুগ চক্র যুগ শুরু (– শেষ) দৈর্ঘ্য সত্য যুগ ৩,৮৯১,১০২ খ্রিস্টপূর্ব ১,৭২৮,০০০ (৪,৮০০) ত্রেতা যুগ ২,১৬৩,১০২ খ্রিস্টপূর্ব ১,২৯৬,০০০ (৩,৬০০) দ্বাপর যুগ ৮৬৭,১০২ খ্রিস্টপূর্ব ৮৬৪,০০০ (২,৪০০) কলি যুগ ৩১০২ খ্রিস্টপূর্ব – ৪২৮,৮৯৯ খৃষ্টাব্দ ৪৩২,০০০ (১,২০০) বছর: ৪৩,২০,০০০ সৌর (১২,০০০ দৈব)
৭১ চতুর্যুগে অর্থাৎ ৩০,৬৭,২০,০০০ বছর হল এক মন্বন্তর বা একজন মনুর রাজত্বকাল। ১৪ মন্বন্তর অর্থাৎ ৪২৯,৪০,৮০,০০০ বছর এবং ১৫ টি সন্ধিকাল (একটি সন্ধিকাল সত্যযুগের সম পরিমান) মিলে হয় মোট ৪৩২,০০,০০,০০০ বছর, যা ব্রহ্মার দিবাভাগ বা ১২ ঘণ্টার সমান।
১৪ জন মনুর নাম যথাক্রমে স্বায়ম্ভুব, স্বারোচিষ, উত্তম, তামস, রৈবত, চাক্ষুষ, বৈবস্বত, সাবর্ণি, দক্ষ সাবর্ণি, ব্রহ্ম সাবর্ণি, ধর্ম সাবর্ণি, রুদ্র সাবর্ণি, দেব সাবর্ণি (রৌচ্য) ও ইন্দ্র সাবর্ণি (ভৌত্যক)। বর্তমান মনুর নাম বৈবস্বত মনু।
ব্রহ্মার এক দিনকে একটি কল্প বলে। ত্রিশটি দিনে এক মাস হয়। বারো মাসে একটি বছর। এভাবে ব্রহ্মা একশত বছর বেঁচে থাকেন। যা মনুষ্য মানে ৩১১,০৪,০০০,০০,০০,০০০ বছরের সমান।
মৎস্য পুরাণে ব্রহ্মার কল্পগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে। যথা- শ্বেত, নীললোহিত, বামদেব, রথান্তর, রৌরব, দেব, বৃহৎ, কন্দর্প, সদ্য, ঈশান, তমঃ, সারস্বত, উদান, গারুড়, কূর্ম, নারসিংহ, সমান, আগ্নেয়, সোম, মানব, তৎপুমান, বৈকুণ্ঠ, লক্ষ্মী, সাবিত্রি, অঘোর, বরাহ, বৈরাজ, গৌরী, মাহেশ্বর ও পিতৃ ।ব্রহ্মার শতবর্ষ আয়ু দুভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগকে পরার্দ্ধ বলে। ব্রহ্মার আয়ুর প্রথম অর্ধভাগ ইতিমধ্যেই গত হয়েছে এবং দ্বিতীয়ার্ধ এখন চলছে। ব্রহ্মার এখন ৫১ তম বছর। বতর্মান কল্পের নাম শ্বেত (১ম কল্প)। এই কল্পে বরাহদেব আবির্ভূত হন বিধায় একে শ্বেতবরাহ কল্পও বলা হয়ে থাকে। বর্তমান কল্পের ৭১ দিব্যযুগের ২৮তম চতুর্যুগে আমরা আছি। এই চতুর্যুগেরও সত্য, ত্রেতা ও দ্বাপর যুগ ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।
স্কন্দপুরাণ প্রভাস খণ্ডের ৭ম অধ্যায় অনুযায়ী ইতোপূর্বে ছয়জন ব্রহ্মা অতীত হয়েছেন। এখন সপ্তম ব্রহ্মার কাল বিদ্যমান। তাঁর নাম শতানন্দ। প্রথম ব্রহ্মার নাম- বিরিঞ্চি, দ্বিতীয় ব্রহ্মা পদ্মভূ, তৃতীয় ব্রহ্মা স্বয়ম্ভূ, চতুর্থ ব্রহ্মা পরমেষ্ঠী, পঞ্চম ব্রহ্মা সুরজ্যেষ্ঠ এবং ষষ্ঠ ব্রহ্মা হেমগর্ভ। এর পরবর্তীতে যে ব্রহ্মা আসবেন তার নাম হবে চতুর্মুখ।
ব্রহ্মার দিবাভাগে অবসান হলে রাত্রি আসে তা প্রলয় কাল। তখন ভুর্লোক, ভুবর্লোক এবং স্বর্গলোক প্রলয় হয়ে যায়। রাত্রির অন্ধকারে লীন হয়ে যায়। শাশ্বত কালের প্রভাবে অসংখ্য জীব তখন প্রলয়ে বিলীন হয়ে যায়, সবকিছু নীরব হয়ে যায়। সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন জলমগ্ন হয়ে থাকে এবং অবিশ্রান্ত বায়ু প্রবাহিত হয়। সংকর্ষণের মুখনিঃসৃত অগ্নির ফলে এই প্রলয়। তখন ঊর্ধ্বে মহর্লোকের অধিবাসী ভৃগু আদি ঋষিগণ অগ্নির তাপে পীড়িত হয়ে জনলোকে গমন করেন।
প্রত্যেক মনুর জীবনের অন্তেও খণ্ড প্রলয় হয়। তারপর পরবর্তী মনুর অবির্ভাব হয় তাদের বংশধরগণ সহ। ব্রহ্মার দিবাভাগের অন্তকালে ভগবানের নারায়ণ এই বিশ্বকে নিজের মধ্যে সংহারপূর্বক অনন্ত শয্যায় শয়ন করেন। তখন ব্রহ্মাও তার মধ্যে প্রবেশপূর্বক নিদ্রিত হয়ে থাকেন। এটি নৈমিত্তিক প্রলয়রূপে কথিত।
ব্রহ্মার আয়ুষ্কাল শেষ হলে মহত্তত্ত্ব, অহংকার এবং পঞ্চতন্মাত্র প্রলয় হয়ে যায়। এই কাল প্রাকৃতিক প্রলয় নামে অভিহিত। তখন সমস্ত ব্রহ্মা- লয় প্রাপ্ত হতে থাকে।
মহাবিষ্ণুর শরীরের লোমকূপ থেকে অসংখ্য ব্রহ্মা- বীজ প্রকাশিত হয়। সেই সমস্ত ব্রহ্মা-রাশি ক্রমশ বৃহৎ আকার ধারন করে। সমগ্র সৃষ্টির বিস্তার হয়। সমগ্র সৃষ্টির স্থিতিকাল মহাবিষ্ণুর একটি শ্বাসমাত্র। একটি শ্বাসত্যাগের সময় থেকে শ্বাসগ্রহণ পর্যন্ত সৃষ্টির অনন্ত মহাবিশ্ব প্রকাশিত থাকে। তার পর শ্বাসগ্রহণ করার ফলে সমস্ত সৃষ্টি মহাবিষ্ণুর শরীরে প্রবিষ্ট হয়। সেই পরিমিত সময়টুকু হচ্ছে ব্রহ্মার আয়ুষ্কাল। তাকে বলা হয় মহাপ্রলয়। ব্রহ্মার প্রতি দিনান্তে যে প্রলয় হয় তা ব্রহ্মাণ্ডের আংশিক প্রলয়। আবার দিনের মধ্যে কোনো কোনো মন্বন্তরে ব্রহ্মাণ্ডে কোনো কোনো গ্রহলোকের প্রলয় হয়ে থাকে। সমগ্র বিশ্ব পরমাণু থেকে শুরু করে বিশাল বিশাল ব্রহ্মা- পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকার সত্তার অভিব্যক্তি। শাশ্বত কাল রূপে সমস্ত কিছুই পরমেশ্বর ভগবানের নিয়ন্ত্রণাধীন। শাশ্বত কাল হচ্ছে জড়াপ্রকৃতির তিনটি গুণের পারস্পরিক ক্রিয়ার আদি উৎস। কাল আমাদের ইন্দ্রিয়ের কার্যকলাপের সাধারণ মাপকাঠি। যার মাধ্যমে আমরা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে পরিমাপ করি। প্রকৃত বিচারে কালের আদি নেই বা অন্ত নেই। জড় জগত সৃষ্টি হয়েছে, ধ্বংস হবে। পূর্বে অস্তিত্ব ছিল এবং ভবিষ্যতে যথাসময়ে সৃষ্টি পালন ও ধ্বংস হবে। কালের এই সুসংবদ্ধ কার্যকলাপ নিত্য। জড়জগতের প্রকাশ ক্ষণস্থায়ী। কিন্ত তা মিথ্যা নয়।চতুর্যুগ বিভাজন দৈব বছর মোট দৈব বছর মানব বছর মোট মানব বছর সত্য যুগ উষা ৪০০ = ৪৮০০ বছর ৩৬০০০ = ১৭,২৮,০০০ বছর সত্য ৪০০০ ৩৬০০০০ সন্ধ্যা ৪০০ ৩৬০০০ ত্রেতা যুগ উষা ৩০০ = ৩৬০০ বছর ৭২০০০ = ১২,৯৬,০০০ বছর ত্রেতা ৩০০০ ৭২০০০০ সন্ধ্যা ৩০০ ৭২০০০ দ্বাপর যুগ উষা ২০০ = ২৪০০ বছর ১০৮০০০ = ৮,৬৪,০০০ বছর দ্বাপর ২০০০ ১০৮০০০০ সন্ধ্যা ২০০ ১০৮০০০ কলি যুগ উষা ১০০ = ১২০০ বছর ১৪৪০০০ = ৪,৩২,০০০ বছর কলি ১০০০ ১৪৪০০০০ সন্ধ্যা ১০০ ১৪৪০০০ মোট =১২,০০০ বছর = ৪৩,২০,০০০ বছর
চতুর্যুগের হিসাব
১) কলি যুগ = ৪৩২০০০ সৌর বছর (সৌর বছর মানে আমাদের হিসাবে ১ বছর)
২) দ্বাপর যুগ = (৪৩২০০০ x 2 ) সৌর বছর
৩) ত্রেতা যুগ (৪৩২০০০X ৩) সৌর বছর
৪) সত্য যুগ (৪৩২০০০X ৪) সৌর বছর
১ চতুর্যুগ/দিব্যযুগ
= সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগের ১ বার আবর্তন
= (৪৩২০০০ + ৪৩২০০০ x ২ + ৮৯২০০০X ৪৩২০০০ X ৪) বছর
- ৪৩২০০০ (১+২+৩+৪) বছর
- ৪৩২০০০ X ১০ বছর
= ৪৩২০০০০ বছর
১ কল্প চতুর্যুগের ১০০০ বার আবর্তন = ৮৯২০০০০ X ১০০০
ব্রহ্মার ১ দিনের হিসাব
১২ ঘন্টা- ১ কল্প- ১০০০ চতুর্যুগ - ৪৩২ কোটি সৌর বছর + ব্রহ্মার রাত্রিভাগ বা ১২ ঘন্টা = ১ কল্প= ১০০০ চতুর্যুগ = ৪৩২ কোটি সৌর বছর
= ব্রহ্মার ১ দিন বা ২৪ ঘণ্টা ২ কল্প ২০০০ চতুর্যুগ ৮৬৪ কোটি সৌর বছর
ব্রহ্মার আয়ুষ্কাল
১০০ বছর (সত্যলোকের সময়ানুসারে)
= ১ বছর X ১০০
= ১২ মাস x ১০০
= ৩০ দিন x ১২ x ১০০
= ১ দিন x ৩০ x ১২ × ১০০
- চতুর্যুগের ২০০০ বার আবর্তন x ৩০ × ১২ x ১০০
= ৮৬৪,০০,০০,০০০x ৩০×১২×১০০
= ৩,১১,০৪,০০০,০০,০০,০০০ বছর
- ৩ কোটি ১১ লক্ষ ৪ হাজার কোটি বছর (প্রায়)
১ কল্পে ১৪ জন মনু রাজত্ব করেন।
১ কল্প = ১০০০ চতুর্যুগ।
প্রত্যেক মনুর শাসনামলে প্রায় ৭১টি চতুর্যুগ
(১০০০+১৪= ৭১.৪৩) আবর্তিত হয়।
১৪ জন মনুর মধ্যে এখন সপ্তম মনুর (বৈবস্বত মনু) শাসনামল। তাঁরও অধীনে ৭১টি চতুর্যুগ আবর্তিত এভাবে কেবল সপ্তম (বৈবস্বান) মনুর ২৮ তম চতুর্যুগের দ্বাপরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আসেন। প্রত্যেক দ্বাপরে তিনি আসেন না এবং ঠিক তার পরের কলিতে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু আসেন। অর্থাৎ, ব্রহ্মার ১ দিনে শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীচৈতন্য কেবল একবার আসেন। বর্তমান কলিযুগটি হল সেই বিশেষ স্বর্ণকলি। কেবল এ কলিযুগে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হরিনাম বিতরণ করেন এবং আচন্ডাল সকলের জন্য গোলক বৃন্দাবনের দ্বার খুলে দেন, প্রত্যেক কলিযুগে সে সুযোগ আসে না। তাই, নিতাই গৌরের আরাধনাকে সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা কর্তব্য।
অর্থাৎ, এভাবে চতুর্দশ মন্বন্তরে এক হাজার চতুর্যুগ গত হলে একে এক কল্প বা ব্রহ্মার এক দিবস বলা হয়।তাহলে এক এক জন মনু ৭১ দিব্যযুগের চেয়ে কিছু বেশি পর্যন্ত আয়ুস্কাল উপভোগ করেন। (১০০০/১৪) = ৭১.৪২
স্বং স্বং কালং সনুর্ভুঙ্ক্তে সাধিকাং হ্যেকসপ্ততিতম্। (শ্রীমদ্ভাগবত ৩/১১/২৪)অর্থাৎ — প্রত্যেক মনু একাত্তর চতুর্যুগের কিছু অধিক কাল পর্যন্ত জীবন উপভোগ করেন। হিন্দু কাল গণনায় যুগের এই ক্রমটি চক্রাকারে সম্পন্ন হয়। এভাবে ব্রাহ্ম অহোরাত্র পরিমান চক্র সম্পন্ন হলে মহাপ্রলয় সংগঠিত হয়।
- ১ যুগ = ১,২০০ দৈব বছর = ৪৩,২০,০০০ মানব বছর।
- ১ মন্বন্তর = ৭১ চতুর্যুগ = ৩০৬,৭২০,০০০ মানব বছর।
- ১ কল্প = ১,০০০ চতুর্যুগ = ৪৩২,০০,০০,০০০ মানব বছর।
- ১ ব্রাহ্ম অহোরাত্র = ২ কল্প = ২,০০০ চতুর্যুগ = ৮৬৪,০০,০০,০০০ মানব বছর।
শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থে (আদি ৩/৭-৮) এগুলো খুব সহজ করে বোঝানো হয়েছে,সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি, চারিযুগ জানি।সেই চারি যুগে দিব্য একযুগ মানি ॥একাত্তর চতুর্যুগে এক মন্বন্তর।চৌদ্দ মন্বন্তর ব্রহ্মার দিবস ভিতর ॥
যুগ চক্র যুগ শুরু (– শেষ) দৈর্ঘ্য সত্য যুগ ৩,৮৯১,১০২ খ্রিস্টপূর্ব ১,৭২৮,০০০ (৪,৮০০) ত্রেতা যুগ ২,১৬৩,১০২ খ্রিস্টপূর্ব ১,২৯৬,০০০ (৩,৬০০) দ্বাপর যুগ ৮৬৭,১০২ খ্রিস্টপূর্ব ৮৬৪,০০০ (২,৪০০) কলি যুগ ৩১০২ খ্রিস্টপূর্ব – ৪২৮,৮৯৯ খৃষ্টাব্দ ৪৩২,০০০ (১,২০০) বছর: ৪৩,২০,০০০ সৌর (১২,০০০ দৈব)
৭১ চতুর্যুগে অর্থাৎ ৩০,৬৭,২০,০০০ বছর হল এক মন্বন্তর বা একজন মনুর রাজত্বকাল। ১৪ মন্বন্তর অর্থাৎ ৪২৯,৪০,৮০,০০০ বছর এবং ১৫ টি সন্ধিকাল (একটি সন্ধিকাল সত্যযুগের সম পরিমান) মিলে হয় মোট ৪৩২,০০,০০,০০০ বছর, যা ব্রহ্মার দিবাভাগ বা ১২ ঘণ্টার সমান।
১৪ জন মনুর নাম যথাক্রমে স্বায়ম্ভুব, স্বারোচিষ, উত্তম, তামস, রৈবত, চাক্ষুষ, বৈবস্বত, সাবর্ণি, দক্ষ সাবর্ণি, ব্রহ্ম সাবর্ণি, ধর্ম সাবর্ণি, রুদ্র সাবর্ণি, দেব সাবর্ণি (রৌচ্য) ও ইন্দ্র সাবর্ণি (ভৌত্যক)। বর্তমান মনুর নাম বৈবস্বত মনু।
ব্রহ্মার এক দিনকে একটি কল্প বলে। ত্রিশটি দিনে এক মাস হয়। বারো মাসে একটি বছর। এভাবে ব্রহ্মা একশত বছর বেঁচে থাকেন। যা মনুষ্য মানে ৩১১,০৪,০০০,০০,০০,০০০ বছরের সমান।
মৎস্য পুরাণে ব্রহ্মার কল্পগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে। যথা- শ্বেত, নীললোহিত, বামদেব, রথান্তর, রৌরব, দেব, বৃহৎ, কন্দর্প, সদ্য, ঈশান, তমঃ, সারস্বত, উদান, গারুড়, কূর্ম, নারসিংহ, সমান, আগ্নেয়, সোম, মানব, তৎপুমান, বৈকুণ্ঠ, লক্ষ্মী, সাবিত্রি, অঘোর, বরাহ, বৈরাজ, গৌরী, মাহেশ্বর ও পিতৃ ।ব্রহ্মার শতবর্ষ আয়ু দুভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগকে পরার্দ্ধ বলে। ব্রহ্মার আয়ুর প্রথম অর্ধভাগ ইতিমধ্যেই গত হয়েছে এবং দ্বিতীয়ার্ধ এখন চলছে। ব্রহ্মার এখন ৫১ তম বছর। বতর্মান কল্পের নাম শ্বেত (১ম কল্প)। এই কল্পে বরাহদেব আবির্ভূত হন বিধায় একে শ্বেতবরাহ কল্পও বলা হয়ে থাকে। বর্তমান কল্পের ৭১ দিব্যযুগের ২৮তম চতুর্যুগে আমরা আছি। এই চতুর্যুগেরও সত্য, ত্রেতা ও দ্বাপর যুগ ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।
স্কন্দপুরাণ প্রভাস খণ্ডের ৭ম অধ্যায় অনুযায়ী ইতোপূর্বে ছয়জন ব্রহ্মা অতীত হয়েছেন। এখন সপ্তম ব্রহ্মার কাল বিদ্যমান। তাঁর নাম শতানন্দ। প্রথম ব্রহ্মার নাম- বিরিঞ্চি, দ্বিতীয় ব্রহ্মা পদ্মভূ, তৃতীয় ব্রহ্মা স্বয়ম্ভূ, চতুর্থ ব্রহ্মা পরমেষ্ঠী, পঞ্চম ব্রহ্মা সুরজ্যেষ্ঠ এবং ষষ্ঠ ব্রহ্মা হেমগর্ভ। এর পরবর্তীতে যে ব্রহ্মা আসবেন তার নাম হবে চতুর্মুখ।
ব্রহ্মার দিবাভাগে অবসান হলে রাত্রি আসে তা প্রলয় কাল। তখন ভুর্লোক, ভুবর্লোক এবং স্বর্গলোক প্রলয় হয়ে যায়। রাত্রির অন্ধকারে লীন হয়ে যায়। শাশ্বত কালের প্রভাবে অসংখ্য জীব তখন প্রলয়ে বিলীন হয়ে যায়, সবকিছু নীরব হয়ে যায়। সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন জলমগ্ন হয়ে থাকে এবং অবিশ্রান্ত বায়ু প্রবাহিত হয়। সংকর্ষণের মুখনিঃসৃত অগ্নির ফলে এই প্রলয়। তখন ঊর্ধ্বে মহর্লোকের অধিবাসী ভৃগু আদি ঋষিগণ অগ্নির তাপে পীড়িত হয়ে জনলোকে গমন করেন।
প্রত্যেক মনুর জীবনের অন্তেও খণ্ড প্রলয় হয়। তারপর পরবর্তী মনুর অবির্ভাব হয় তাদের বংশধরগণ সহ। ব্রহ্মার দিবাভাগের অন্তকালে ভগবানের নারায়ণ এই বিশ্বকে নিজের মধ্যে সংহারপূর্বক অনন্ত শয্যায় শয়ন করেন। তখন ব্রহ্মাও তার মধ্যে প্রবেশপূর্বক নিদ্রিত হয়ে থাকেন। এটি নৈমিত্তিক প্রলয়রূপে কথিত।
ব্রহ্মার আয়ুষ্কাল শেষ হলে মহত্তত্ত্ব, অহংকার এবং পঞ্চতন্মাত্র প্রলয় হয়ে যায়। এই কাল প্রাকৃতিক প্রলয় নামে অভিহিত। তখন সমস্ত ব্রহ্মা- লয় প্রাপ্ত হতে থাকে।
মহাবিষ্ণুর শরীরের লোমকূপ থেকে অসংখ্য ব্রহ্মা- বীজ প্রকাশিত হয়। সেই সমস্ত ব্রহ্মা-রাশি ক্রমশ বৃহৎ আকার ধারন করে। সমগ্র সৃষ্টির বিস্তার হয়। সমগ্র সৃষ্টির স্থিতিকাল মহাবিষ্ণুর একটি শ্বাসমাত্র। একটি শ্বাসত্যাগের সময় থেকে শ্বাসগ্রহণ পর্যন্ত সৃষ্টির অনন্ত মহাবিশ্ব প্রকাশিত থাকে। তার পর শ্বাসগ্রহণ করার ফলে সমস্ত সৃষ্টি মহাবিষ্ণুর শরীরে প্রবিষ্ট হয়। সেই পরিমিত সময়টুকু হচ্ছে ব্রহ্মার আয়ুষ্কাল। তাকে বলা হয় মহাপ্রলয়। ব্রহ্মার প্রতি দিনান্তে যে প্রলয় হয় তা ব্রহ্মাণ্ডের আংশিক প্রলয়। আবার দিনের মধ্যে কোনো কোনো মন্বন্তরে ব্রহ্মাণ্ডে কোনো কোনো গ্রহলোকের প্রলয় হয়ে থাকে। সমগ্র বিশ্ব পরমাণু থেকে শুরু করে বিশাল বিশাল ব্রহ্মা- পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকার সত্তার অভিব্যক্তি। শাশ্বত কাল রূপে সমস্ত কিছুই পরমেশ্বর ভগবানের নিয়ন্ত্রণাধীন। শাশ্বত কাল হচ্ছে জড়াপ্রকৃতির তিনটি গুণের পারস্পরিক ক্রিয়ার আদি উৎস। কাল আমাদের ইন্দ্রিয়ের কার্যকলাপের সাধারণ মাপকাঠি। যার মাধ্যমে আমরা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে পরিমাপ করি। প্রকৃত বিচারে কালের আদি নেই বা অন্ত নেই। জড় জগত সৃষ্টি হয়েছে, ধ্বংস হবে। পূর্বে অস্তিত্ব ছিল এবং ভবিষ্যতে যথাসময়ে সৃষ্টি পালন ও ধ্বংস হবে। কালের এই সুসংবদ্ধ কার্যকলাপ নিত্য। জড়জগতের প্রকাশ ক্ষণস্থায়ী। কিন্ত তা মিথ্যা নয়।চতুর্যুগ বিভাজন দৈব বছর মোট দৈব বছর মানব বছর মোট মানব বছর সত্য যুগ উষা ৪০০ = ৪৮০০ বছর ৩৬০০০ = ১৭,২৮,০০০ বছর সত্য ৪০০০ ৩৬০০০০ সন্ধ্যা ৪০০ ৩৬০০০ ত্রেতা যুগ উষা ৩০০ = ৩৬০০ বছর ৭২০০০ = ১২,৯৬,০০০ বছর ত্রেতা ৩০০০ ৭২০০০০ সন্ধ্যা ৩০০ ৭২০০০ দ্বাপর যুগ উষা ২০০ = ২৪০০ বছর ১০৮০০০ = ৮,৬৪,০০০ বছর দ্বাপর ২০০০ ১০৮০০০০ সন্ধ্যা ২০০ ১০৮০০০ কলি যুগ উষা ১০০ = ১২০০ বছর ১৪৪০০০ = ৪,৩২,০০০ বছর কলি ১০০০ ১৪৪০০০০ সন্ধ্যা ১০০ ১৪৪০০০ মোট =১২,০০০ বছর = ৪৩,২০,০০০ বছর
চতুর্যুগের হিসাব
১) কলি যুগ = ৪৩২০০০ সৌর বছর (সৌর বছর মানে আমাদের হিসাবে ১ বছর)
২) দ্বাপর যুগ = (৪৩২০০০ x 2 ) সৌর বছর
৩) ত্রেতা যুগ (৪৩২০০০X ৩) সৌর বছর
৪) সত্য যুগ (৪৩২০০০X ৪) সৌর বছর
১ চতুর্যুগ/দিব্যযুগ
= সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগের ১ বার আবর্তন
= (৪৩২০০০ + ৪৩২০০০ x ২ + ৮৯২০০০X ৪৩২০০০ X ৪) বছর
- ৪৩২০০০ (১+২+৩+৪) বছর
- ৪৩২০০০ X ১০ বছর
= ৪৩২০০০০ বছর
১ কল্প চতুর্যুগের ১০০০ বার আবর্তন = ৮৯২০০০০ X ১০০০
ব্রহ্মার ১ দিনের হিসাব
১২ ঘন্টা- ১ কল্প- ১০০০ চতুর্যুগ - ৪৩২ কোটি সৌর বছর + ব্রহ্মার রাত্রিভাগ বা ১২ ঘন্টা = ১ কল্প= ১০০০ চতুর্যুগ = ৪৩২ কোটি সৌর বছর
= ব্রহ্মার ১ দিন বা ২৪ ঘণ্টা ২ কল্প ২০০০ চতুর্যুগ ৮৬৪ কোটি সৌর বছর
ব্রহ্মার আয়ুষ্কাল
১০০ বছর (সত্যলোকের সময়ানুসারে)
= ১ বছর X ১০০
= ১২ মাস x ১০০
= ৩০ দিন x ১২ x ১০০
= ১ দিন x ৩০ x ১২ × ১০০
- চতুর্যুগের ২০০০ বার আবর্তন x ৩০ × ১২ x ১০০
= ৮৬৪,০০,০০,০০০x ৩০×১২×১০০
= ৩,১১,০৪,০০০,০০,০০,০০০ বছর
- ৩ কোটি ১১ লক্ষ ৪ হাজার কোটি বছর (প্রায়)
১ কল্পে ১৪ জন মনু রাজত্ব করেন।
১ কল্প = ১০০০ চতুর্যুগ।
প্রত্যেক মনুর শাসনামলে প্রায় ৭১টি চতুর্যুগ
(১০০০+১৪= ৭১.৪৩) আবর্তিত হয়।
১৪ জন মনুর মধ্যে এখন সপ্তম মনুর (বৈবস্বত মনু) শাসনামল। তাঁরও অধীনে ৭১টি চতুর্যুগ আবর্তিত এভাবে কেবল সপ্তম (বৈবস্বান) মনুর ২৮ তম চতুর্যুগের দ্বাপরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আসেন। প্রত্যেক দ্বাপরে তিনি আসেন না এবং ঠিক তার পরের কলিতে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু আসেন। অর্থাৎ, ব্রহ্মার ১ দিনে শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীচৈতন্য কেবল একবার আসেন। বর্তমান কলিযুগটি হল সেই বিশেষ স্বর্ণকলি। কেবল এ কলিযুগে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হরিনাম বিতরণ করেন এবং আচন্ডাল সকলের জন্য গোলক বৃন্দাবনের দ্বার খুলে দেন, প্রত্যেক কলিযুগে সে সুযোগ আসে না। তাই, নিতাই গৌরের আরাধনাকে সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা কর্তব্য।
হিন্দু কাল গণনায় যুগের এই ক্রমটি চক্রাকারে সম্পন্ন হয়। এভাবে ব্রাহ্ম অহোরাত্র পরিমান চক্র সম্পন্ন হলে মহাপ্রলয় সংগঠিত হয়।
- ১ যুগ = ১,২০০ দৈব বছর = ৪৩,২০,০০০ মানব বছর।
- ১ মন্বন্তর = ৭১ চতুর্যুগ = ৩০৬,৭২০,০০০ মানব বছর।
- ১ কল্প = ১,০০০ চতুর্যুগ = ৪৩২,০০,০০,০০০ মানব বছর।
- ১ ব্রাহ্ম অহোরাত্র = ২ কল্প = ২,০০০ চতুর্যুগ = ৮৬৪,০০,০০,০০০ মানব বছর।
যুগ | শুরু (– শেষ) | দৈর্ঘ্য |
---|---|---|
সত্য যুগ | ৩,৮৯১,১০২ খ্রিস্টপূর্ব | ১,৭২৮,০০০ (৪,৮০০) |
ত্রেতা যুগ | ২,১৬৩,১০২ খ্রিস্টপূর্ব | ১,২৯৬,০০০ (৩,৬০০) |
দ্বাপর যুগ | ৮৬৭,১০২ খ্রিস্টপূর্ব | ৮৬৪,০০০ (২,৪০০) |
কলি যুগ | ৩১০২ খ্রিস্টপূর্ব – ৪২৮,৮৯৯ খৃষ্টাব্দ | ৪৩২,০০০ (১,২০০) |
বছর: ৪৩,২০,০০০ সৌর (১২,০০০ দৈব) |
১৪ জন মনুর নাম যথাক্রমে স্বায়ম্ভুব, স্বারোচিষ, উত্তম, তামস, রৈবত, চাক্ষুষ, বৈবস্বত, সাবর্ণি, দক্ষ সাবর্ণি, ব্রহ্ম সাবর্ণি, ধর্ম সাবর্ণি, রুদ্র সাবর্ণি, দেব সাবর্ণি (রৌচ্য) ও ইন্দ্র সাবর্ণি (ভৌত্যক)। বর্তমান মনুর নাম বৈবস্বত মনু।
ব্রহ্মার এক দিনকে একটি কল্প বলে। ত্রিশটি দিনে এক মাস হয়। বারো মাসে একটি বছর। এভাবে ব্রহ্মা একশত বছর বেঁচে থাকেন। যা মনুষ্য মানে ৩১১,০৪,০০০,০০,০০,০০০ বছরের সমান।
স্কন্দপুরাণ প্রভাস খণ্ডের ৭ম অধ্যায় অনুযায়ী ইতোপূর্বে ছয়জন ব্রহ্মা অতীত হয়েছেন। এখন সপ্তম ব্রহ্মার কাল বিদ্যমান। তাঁর নাম শতানন্দ। প্রথম ব্রহ্মার নাম- বিরিঞ্চি, দ্বিতীয় ব্রহ্মা পদ্মভূ, তৃতীয় ব্রহ্মা স্বয়ম্ভূ, চতুর্থ ব্রহ্মা পরমেষ্ঠী, পঞ্চম ব্রহ্মা সুরজ্যেষ্ঠ এবং ষষ্ঠ ব্রহ্মা হেমগর্ভ। এর পরবর্তীতে যে ব্রহ্মা আসবেন তার নাম হবে চতুর্মুখ।
ব্রহ্মার দিবাভাগে অবসান হলে রাত্রি আসে তা প্রলয় কাল। তখন ভুর্লোক, ভুবর্লোক এবং স্বর্গলোক প্রলয় হয়ে যায়। রাত্রির অন্ধকারে লীন হয়ে যায়। শাশ্বত কালের প্রভাবে অসংখ্য জীব তখন প্রলয়ে বিলীন হয়ে যায়, সবকিছু নীরব হয়ে যায়। সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন জলমগ্ন হয়ে থাকে এবং অবিশ্রান্ত বায়ু প্রবাহিত হয়। সংকর্ষণের মুখনিঃসৃত অগ্নির ফলে এই প্রলয়। তখন ঊর্ধ্বে মহর্লোকের অধিবাসী ভৃগু আদি ঋষিগণ অগ্নির তাপে পীড়িত হয়ে জনলোকে গমন করেন।
প্রত্যেক মনুর জীবনের অন্তেও খণ্ড প্রলয় হয়। তারপর পরবর্তী মনুর অবির্ভাব হয় তাদের বংশধরগণ সহ। ব্রহ্মার দিবাভাগের অন্তকালে ভগবানের নারায়ণ এই বিশ্বকে নিজের মধ্যে সংহারপূর্বক অনন্ত শয্যায় শয়ন করেন। তখন ব্রহ্মাও তার মধ্যে প্রবেশপূর্বক নিদ্রিত হয়ে থাকেন। এটি নৈমিত্তিক প্রলয়রূপে কথিত।
ব্রহ্মার আয়ুষ্কাল শেষ হলে মহত্তত্ত্ব, অহংকার এবং পঞ্চতন্মাত্র প্রলয় হয়ে যায়। এই কাল প্রাকৃতিক প্রলয় নামে অভিহিত। তখন সমস্ত ব্রহ্মা- লয় প্রাপ্ত হতে থাকে।
মহাবিষ্ণুর শরীরের লোমকূপ থেকে অসংখ্য ব্রহ্মা- বীজ প্রকাশিত হয়। সেই সমস্ত ব্রহ্মা-রাশি ক্রমশ বৃহৎ আকার ধারন করে। সমগ্র সৃষ্টির বিস্তার হয়। সমগ্র সৃষ্টির স্থিতিকাল মহাবিষ্ণুর একটি শ্বাসমাত্র। একটি শ্বাসত্যাগের সময় থেকে শ্বাসগ্রহণ পর্যন্ত সৃষ্টির অনন্ত মহাবিশ্ব প্রকাশিত থাকে। তার পর শ্বাসগ্রহণ করার ফলে সমস্ত সৃষ্টি মহাবিষ্ণুর শরীরে প্রবিষ্ট হয়। সেই পরিমিত সময়টুকু হচ্ছে ব্রহ্মার আয়ুষ্কাল। তাকে বলা হয় মহাপ্রলয়। ব্রহ্মার প্রতি দিনান্তে যে প্রলয় হয় তা ব্রহ্মাণ্ডের আংশিক প্রলয়। আবার দিনের মধ্যে কোনো কোনো মন্বন্তরে ব্রহ্মাণ্ডে কোনো কোনো গ্রহলোকের প্রলয় হয়ে থাকে। সমগ্র বিশ্ব পরমাণু থেকে শুরু করে বিশাল বিশাল ব্রহ্মা- পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকার সত্তার অভিব্যক্তি। শাশ্বত কাল রূপে সমস্ত কিছুই পরমেশ্বর ভগবানের নিয়ন্ত্রণাধীন। শাশ্বত কাল হচ্ছে জড়াপ্রকৃতির তিনটি গুণের পারস্পরিক ক্রিয়ার আদি উৎস। কাল আমাদের ইন্দ্রিয়ের কার্যকলাপের সাধারণ মাপকাঠি। যার মাধ্যমে আমরা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে পরিমাপ করি। প্রকৃত বিচারে কালের আদি নেই বা অন্ত নেই। জড় জগত সৃষ্টি হয়েছে, ধ্বংস হবে। পূর্বে অস্তিত্ব ছিল এবং ভবিষ্যতে যথাসময়ে সৃষ্টি পালন ও ধ্বংস হবে। কালের এই সুসংবদ্ধ কার্যকলাপ নিত্য। জড়জগতের প্রকাশ ক্ষণস্থায়ী। কিন্ত তা মিথ্যা নয়।
চতুর্যুগ | বিভাজন | দৈব বছর | মোট দৈব বছর | মানব বছর | মোট মানব বছর |
সত্য যুগ | উষা | ৪০০ | = ৪৮০০ বছর | ৩৬০০০ | = ১৭,২৮,০০০ বছর |
সত্য | ৪০০০ | ৩৬০০০০ | |||
সন্ধ্যা | ৪০০ | ৩৬০০০ | |||
ত্রেতা যুগ | উষা | ৩০০ | = ৩৬০০ বছর | ৭২০০০ | = ১২,৯৬,০০০ বছর |
ত্রেতা | ৩০০০ | ৭২০০০০ | |||
সন্ধ্যা | ৩০০ | ৭২০০০ | |||
দ্বাপর যুগ | উষা | ২০০ | = ২৪০০ বছর | ১০৮০০০ | = ৮,৬৪,০০০ বছর |
দ্বাপর | ২০০০ | ১০৮০০০০ | |||
সন্ধ্যা | ২০০ | ১০৮০০০ | |||
কলি যুগ | উষা | ১০০ | = ১২০০ বছর | ১৪৪০০০ | = ৪,৩২,০০০ বছর |
কলি | ১০০০ | ১৪৪০০০০ | |||
সন্ধ্যা | ১০০ | ১৪৪০০০ | |||
মোট | =১২,০০০ বছর | = ৪৩,২০,০০০ বছর |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন