দেশের বেশিরভাগ রাজ্যের মকর সংক্রান্তি কৃষি উত্সব হিসেবে পালন করা হয়। মকর সংক্রান্তি থেকেই যেহেতু সূর্যের উত্তরায়ন শুরু হয়, তাই এই দিনটি বসন্ত ঋতুকে স্বাগত জানানোর দিন হিসেবে পালন করা হয়। মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি বা উত্তরায়ণ সংক্রান্তি থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী ছয় মাস ধরে চলে সূর্যের উত্তরায়ন। মূলত জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি ক্ষণ। 'মকরসংক্রান্তি' শব্দটি দিয়ে নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশকে বোঝানো হয়ে থাকে। ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী 'সংক্রান্তি' একটি সংস্কৃত শব্দ, এর দ্বারা সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়ে থাকে। 12টি রাশি অনুযায়ী এরকম সর্বমোট 12টি সংক্রান্তি রয়েছে। এই দিনটিতেই শেষ হচ্ছে সূর্যের দক্ষিণায়ন। এবার শুরু সূর্যের উত্তরায়ন। নিজের কক্ষতলের সঙ্গে 66.5 ডিগ্রী কোণ করে পৃথিবীর মেরুরেখা নিজের কক্ষপথ ধরে অবিরাম সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। এভাবে পৃথিবীর সূর্য পরিক্রমার সময়, বছরের কয়েকটি বিশেষ দিনে মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর নির্দিষ্ট কয়েকটি অক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে। সেই সময় ভূপৃষ্ঠের অন্যত্র সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পতিত হয়। ফলে একদিকে যেমন : দিনরাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি হয়, অন্যদিকে তেমনি পরিবর্তন ঘটে।মকর সংক্রান্তিতে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড় এবং রাত্রি সবচেয়ে ছোট হয় । ছায়াবৃত্ত এই সময় উত্তর গোলার্ধের দিকে ক্রমশ সরে যায় । উত্তর গোলার্ধে এর ঠিক বিপরীত অবস্থা সৃষ্টি হয় & এই সময় দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল এবং উত্তর গোলার্ধে শীতকাল বিরাজ করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় এই দিবস বা ক্ষণকে ঘিরে উদযাপিত হয় উৎসব।নেপালে এই দিবসটি মাঘি নামে, থাইল্যান্ডে সংক্রান, লাওসে পি মা লাও, মিয়ানমারে থিং ইয়ান এবং কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান নামে উদযাপিত হয়। বাংলাদেশের পুরান ঢাকায় পৌষসংক্রান্তি সাকরাইন নামে পরিচিত।অবশ্যিকভাবে দেশ ভেদে এর নামের মতোই উৎসবের ধরনে থাকে পার্থক্য।
নতুন ধান, খেজুরের গুড় এবং পাটালি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরি করা হয়, যার জন্য প্রয়োজন হয় চালের গুঁড়া, নারিকেল, দুধ আর খেজুরের গুড়। মকরসংক্রান্তি নতুন ফসলের উৎসব ছাড়াও ভারতীয় সংস্কৃতিতে 'উত্তরায়ণের সূচনা' হিসেবে পরিচিত। একে অশুভ সময়ের শেষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ।
নিম্নলিখিত পূজা উৎসব পালিত হবে ।
1.সত্যনারায়ণ ব্রত
2.দধিসংক্রান্তি ব্রত
3.বাস্তু পূজা
4.টুসু পূজা
5.আচারসোদর ব্রত
6.মাঘি-স্নান আরম্ভ
7.ভোগালী উৎসব
8. পোঙ্গল উৎসব
9. পৌষ পার্বন
10. সূর্য পূজা
11. আউনি বাউনি-শস্যপূজা
12.কৃষি উত্সব
13. পুণ্যতরা গঙ্গা স্নান
14. তিলগুড় উত্সব
15. 'ইল্লু বিল্লা' উত্সব
16. অভিলাষ উৎসব
17. ঘুড়ি উৎসব
18. গরু দৌড় প্রতিযোগিতা উৎসব
এই সংক্রান্তি পলিত হবে এবং আচার বসত বাহির প্রাঙ্গণে শ্রী শ্রী লক্ষ্মী পূজা এবং কেউ মাংসস্টক শ্রাদ্ধকরতে পারেন এবং এমন দিনে গুড়ের তৈরি জিনিস খেয়ে উদযাপন করার প্রচলন রয়েছে।
1. বলা হয়, সংক্রান্তি দেবী নাকি এই দিনই শঙ্করাসুর নামের দানবকে বধ করেন।
2. মহাভারতেও এই দিনটির উল্লেখ আছে। এদিন নাকি ভীষ্ম ইচ্ছামৃত্যু বরণ করেছিলেন।
3. সূর্যদেবতার কথাও আছে পুরানে। সেখানে বলা হয়েছে এই দিনই নাকি তিনি শনির গৃহে এক মাসের জন্য ঘুরতে যান।
4. এদিন নাকি দেবতাদের সঙ্গে অসুরদের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। যুদ্ধে দেবতাদের বিজয় হয়। মৃত অসুরদের মাথা মন্দিরা পর্বতের তলায় পুঁতে দেওয়া হয়।
5.এই দিনটিতে নাকি অশুভ শক্তির শেষ হয়ে শুভ শক্তির সূচনা হয়।
6. সংক্রান্তির অর্থ গমন করা। সূর্য এদিন মকর রাশিতে গমন করে বলে, এই দিনটিকে আর এক হিসাবেও শুভ বলে ধরা হয়।
7. তবে এই দিনটির সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব ফসল তোলার ক্ষেত্রে। নতুন ফসল ঘরে তোলার সূচনা হয় এ দিনই।
8. বাঙালি বাড়িতে এদিন পৌষ পার্বণ পালন করা হয়। বানানো হয় পিঠেপুলি, পাটিসাপটা।
9. এদিন নিজের গৃহে রাত্রিবাসের নিয়ম মানেন অনেক বাঙালিই।পৌষ পার্বণ ছাড়াও মকর সংক্রান্তির সময়ে বাংলায় নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়।
10. এই দিন বাঙালিরা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। তার মধ্যে পিঠা খাওয়া, ঘুড়ি উড়ানো অন্যতম। সারাদিন ঘুড়ি উড়ানোব পরে সন্ধ্যায় পটকা ফুটিয়ে ফানুস উড়িয়ে উৎসবের সমাপ্তি করে।
11. গঙ্গাসাগর মেলা তো আছেই-এই দিনে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত সাগরদ্বীপে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে কপিল মুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করে পুণ্যস্নান ও বিরাট মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সহস্রাধিক পুণ্যার্থী ও অন্যান্য রাজ্য থেকে আগত দর্শনার্থীদের সমাগম হয় এই মেলায়।
12. বীরভূমের কেন্দুলি গ্রামে এদিন জয়দেবের মেলাও হয়। ভারতের বীরভূমের কেন্দুলী গ্রামে এই দিনটিকে ঘিরে ঐতিহ্যময় জয়দেব মেলা হয়। বাউল গান এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ।
13. ভারতবর্ষের মতো একটি উষ্ণ অঞ্চলে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে আরামপ্রদ সময় শীতকাল। এখানে বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং অন্যান্য উপহার ছাড়াও পৌষমেলার মাধ্যমে পৌষসংক্রান্তি উদ্যাপিত হয়। বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিশেষ করে বাউল গানের আসর বসে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন