ভক্তি শব্দের অর্থ
'ভক্তি' শব্দের সাধারণ অর্থ ঈশ্বর সেবা। ঈশ্বর ছাড়াও দেশভক্তি, মাতৃভক্তি, পিতৃভক্তি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আধাত্মিক ক্ষেত্রে ঈশ্বরর সাথে বা ভজনীয় দেবতার প্রতি থাকা গভীর অনুরাগ এবং প্রীতিয়েই ভক্তি। ভক্তি এক মানসিক অবস্থা। ভক্তির স্তর তিনটি শ্রদ্ধা, রতি এবং ভক্তি। গানে চার প্রকার ভক্তির কথা উল্লেখ করা হচ্ছে—
- আর্ত,
- জিজ্ঞাসু,
- অর্থার্থী এবং
- জ্ঞানী
ভক্তির শ্রেণী বিভাজন
বহুল অর্থে ভক্তির শ্রেণী দুটি-
- গৌণভক্তি এবং
- পরাভক্তি
স্মরনম পদ-সেবনম্
অর্চনাম বন্দনাম দাস্যম সখ্যম্
আত্ম-নিবেদানম্
শাস্ত্র ব্যাখ্যা করে যে নববিধা ভক্তির একটি নীতি অনুশীলন করার মাধ্যমে একজন সম্পূর্ণ পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারে এবং আধ্যাত্মিক জগতে ফিরে যেতে পারে। ভক্তি-রসামৃত-সিন্ধুতে শ্রীল রূপা গোস্বামী (1.2.265) ভক্তদের উদাহরণ দিয়েছেন যারা নববিধা ভক্তির একটি প্রক্রিয়া অনুশীলন করার মাধ্যমে মোক্ষ লাভ করেছিলেন।
শ্রী-বিষ্ণোঃ শ্রাবণে পরিক্ষিদ আভাদ্ বৈয়াসকিঃ কীর্তনে
প্রহ্লাদঃ স্মরণে তদ-অংঘ্রী-ভজনে লক্ষ্মীঃ পৃঃথুথুণেথঃ
কাষ্ঠপতিঃ কথ্যপতিঃ খেয়ে 'রজুনঃ
সর্বস্বাত্ম-নিবেদনে বলির অভূত কৃষ্ণাপ্তির এশাম পরম
শ্রীল রূপা গোস্বামী প্রদত্ত নববিধা ভক্তির উদাহরণ
আসুন বিস্তারিতভাবে বুঝতে পারি:
শ্রাবণম ( শ্রবণ):
শ্রাবণম বা শ্রবণ হল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভক্তিমূলক কাজ। পরীক্ষিত মহারাজ সুকদেব গোস্বামীর কাছ থেকে ক্রমাগত সাত দিন শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণ করে সম্পূর্ণ সিদ্ধি লাভ করেন।
কীর্তনম ( জপ):
শুকদেব গোস্বামী রাজা পরীক্ষিতের কাছে সাত দিন শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ করে অর্থাৎ শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ করে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন।
স্মরনম ( মনে রাখা):
প্রহ্লাদ মহারাজ সর্বদা ( স্মরণ) ভগবানকে স্মরণ করতেন। তিনি এক মুহূর্তের জন্যও প্রভুকে ভুলে যাননি।
পদ-সেবনম ( প্রভুর পায়ের সেবা করা):
সৌভাগ্যের দেবী লক্ষ্মীদেবী সর্বদা ভগবানের পদ্মের সেবায় ব্যস্ত থাকেন।
অর্চনাম ( উপাসনা করা ):
পৃথু মহারাজ ভগবানের দেবতার উপাসনা করেছিলেন এবং তাঁর জীবনকে পরিপূর্ণ করেছিলেন।
বন্দনাম (প্রার্থনা করা) :
বৃন্দাবনে প্রবেশ করার সময় অক্রুর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করলেন। এইভাবে তিনি তাঁর সুন্দর প্রার্থনার মাধ্যমে কৃষ্ণকে খুশি করেছিলেন এবং মোক্ষ লাভ করেছিলেন।
দাস্যম (সেবক হওয়া) :
ভগবান রামের মহান ভক্ত হনুমান সর্বদা ভগবান রামের আদেশের সেবা করতে আগ্রহী ছিলেন। একজন নম্র এবং অনুগত ভৃত্যের মতো, তিনি ভগবানের সেবা করতে পছন্দ করতেন এবং এইভাবে তিনি ভগবান রামের করুণা এবং চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা অর্জন করেছিলেন।সখ্যম ( সবচেয়ে ভালো বন্ধু হওয়া):
অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় বন্ধু হয়ে মোক্ষ লাভ করেন।
আত্মা-নিবেদনাম ( সমর্পণ করা, যা কিছু আছে):
বালি মহারাজ তাঁর নিজের সহ সমস্ত কিছু ভগবান বামনের কাছে সমর্পণ করেছিলেন এবং ভগবানের করুণা লাভ করেছিলেন।
নববিধা ভক্তির নয়টি প্রক্রিয়াই রাজা অম্বরীশের দ্বারা অনুশীলন করা হয়েছিল।
শুদ্ধভক্তির ক্রমপন্থা :-
(শ্রীল রূপ গোস্বামী প্রভুর শ্রীভক্তিরসামৃতসিন্ধু হইতে উদ্ধৃত)
(১) শ্রদ্ধা—সাধুসঙ্গে শাস্ত্র-শ্রবণদ্বারা শাস্ত্রের অর্থে বিশ্বাস ।
(২) সাধুসঙ্গ—দ্বিতীয় সাধুসঙ্গ, ভজনরীতি-শিক্ষার জন্য ইহাই গুরুপদাশ্রয় ।
(৩) ভজনক্রিয়া—গুরু ও সাধুগণের উপদেশ-ক্রমে শ্রবণ-কীর্ত্তনাদিরূপ ভজন ।
(৪) অনর্থনিবৃত্তি—পরমপুরুষার্থ বিরোধী পাপ, অবিদ্যাদি ক্লেশ ক্ষয় ।
(৫) নিষ্ঠা—চিত্তবিক্ষেপশূন্য নিরন্তর ভজন ।
(৬) রুচি—বুদ্ধিপূর্ব্বক ভজনে বা ভজনীয় বিষয়ে অভিলাষ ।
(৭) আসক্তি—ভজনে বা ভজনীয় বিষয়ে স্বাভাবিকী রুচি ।
(৮) ভাব—প্রেমসূর্য্যের কিরণস্থলীয় বিশুদ্ধসত্ত্বরূপ রুচিদ্বারা চিত্তকে যে তত্ত্ব মসৃণ করে, তাহাকেই ‘ভাব’ বলে ।
(৯) প্রেম—যখন সেই ভাব চিত্তকে সম্যক্ মসৃণ করিয়া অত্যন্ত মমতা দ্বারা পরিচিত হয় এবং স্বয়ং গাঢ়-স্বরূপ হয়, তখন তাহাকে পণ্ডিতসকল ‘প্রেম” বলিয়া উক্তি করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন