ভাগবত ও পুরাণ পাঠ

ভাগবত ও পুরাণ পাঠ :গৌর গদাধর সম্প্রদায় (সাটুই , মুর্শিদাবাদ)

Breaking

Post Top Ad

২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

শিক্ষাষ্টক - শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু



শিক্ষাষ্টক বলতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু রচনা করা আটটি প্রার্থনামূলক শ্লোককে বোঝানো হয়। শিক্ষাষ্টকই মহাপ্রভুর জীবদ্দশায় লিখিত একমাত্র রচনা। কৃষ্ণদাস কবিরাজের শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতেও এই শ্লোকগুলোর উল্লেখ রয়েছে।

শিক্ষা শব্দের অর্থ হলো 'নির্দেশনা’ আর অষ্টক মানে হচ্ছে 'আট'।

শিক্ষাষ্টকম  হল 16 শতকের গৌড়ীয় বৈষ্ণব হিন্দু প্রার্থনা যা সংস্কৃত ভাষায় রচিত আটটি শ্লোক । চৈতন্য মহাপ্রভু (1486 - 1534) দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে লিখিত একমাত্র শ্লোকগুলিই  তাঁর দর্শনের অধিকাংশই তাঁর প্রাথমিক শিষ্যদের দ্বারা সংযোজিত হয়েছে, যাঁরা বৃন্দাবনের ছয় গোস্বামী নামে পরিচিত । শিক্ষাষ্টকম চৈতন্য চরিতামৃতের মধ্যে উদ্ধৃত হয়েছে , কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী, বাংলা ভাষায় লেখা। প্রার্থনার নামটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ শিক্ষা, যার অর্থ 'নির্দেশ', এবং অষ্টক , যার অর্থ 'আটটি অংশ নিয়ে গঠিত', অর্থাৎ স্তবক। আটটি শ্লোকের মধ্যে থাকা শিক্ষাগুলি গৌড়ীয় ঐতিহ্যের মধ্যে ভক্তি যোগের সমস্ত শিক্ষার সারাংশ ধারণ করে বলে মনে করা হয়।

चेतो-दर्पण-मार्जनं भव-महा-दावाग्नि-निर्वापणं
श्रेयः-कैरव-चन्द्रिका-वितरणं विद्या-वधू-जीवनम्
आनन्दाम्बुधि-वर्धनं प्रति-पदं पूर्णामृतास्वादनं
सर्वात्म-स्नपनं परं विजयते श्री-कृष्ण-सङ्कीर्तनम्

চেতোদর্পণমার্জনং ভবমহাদাবাগ্নি-নির্বাপণং
শ্রেয়ঃকৈরবচন্দ্রিকাবিতরণং বিদ্যাবধূজীবনম্।
আনন্দাম্বুধির্বনং প্রতিপদং পূর্ণামৃতাস্বাদনং
সর্বাত্মস্নপনং পরং বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণসংকীর্তনম্।।

नाम्नामकारि बहुधा निज-सर्व-शक्तिस्
तत्रार्पिता नियमितः स्मरणे न कालः
एतादृशी तव कृपा भगवन्ममापि
दुर्दैवमीदृशमिहाजनि नानुरागः ॥२॥

নাম্নামকারি বহুধা নিজসর্বশক্তি-
স্ততার্পিতা নিয়মিতঃ স্মরণে ন কালঃ।
এতাদৃশী তব কৃপা ভগবন্মমাপি
দুর্দৈবমীদৃশ্যমিহাজনি নানুরাগঃ।।

तृणादऽपि सुनीचेन
तरोरऽपि सहिष्णुना
अमानिना मानदेन
कीर्तनीयः सदा हरिः ॥३॥

তৃণাদপি সুনীচেন তরোরিব সহিষ্ণুনা।
অমানিনা মানদেন কীর্তনীয়ঃ সদা হরিঃ।।

न धनं न जनं न सुन्दरीं
कवितां वा जगदीश कामये
मम जन्मनि जन्मनीश्वरे
भवताद् भक्तिर् अहैतुकी त्वयि ॥४॥

ন ধনং ন জনং ন সুন্দরীং
কবিতাং বা জগদীশ কাময়ে।
মম জন্মনি জন্মনীশ্বরে
ভবতাদ্ভক্তিরহৈতুকী ত্বয়ি।।

अयि नन्द-तनुज किङ्करं
पतितं मां विषमे भवाम्बुधौ
कृपया तव पाद-पङ्कज-
स्थित-धूली-सदृशं विचिन्तय ॥५॥

অয়ি নন্দতনুজ কিঙ্করং
পতিতং মাং বিষমে ভবাম্বুধৌ।
কৃপয়া তব পাদপঙ্কজ-
স্থিতধূলীসদৃশং বিচিন্তয়।।

नयनं गलदश्रुधारया वदनं गदगदरुद्धया गिरा।
 पुलकैर्निचितं वपुः कदा तव नाम-ग्रहणे भविष्यति॥६॥

নয়নং গলদশ্রুধারয়া বদনং গদগদরুদ্ধয়া গিরা।
পুলকৈর্নিচিতং বপুঃ কদা তব নামগ্রহণে ভবিষ্যতি।

युगायितं निमेषेण
चक्षुषा प्रावृषायितम्
शून्यायितं जगत्सर्वं
गोविन्द-विरहेण मे ॥७॥

যুগায়িতং নিমেষেণ চক্ষুষা প্রাবৃষায়িতম্।
শূন্যায়িতং জগৎ সর্বং গোবিন্দবিরহেণ মে।।

आश्लिष्य वा पाद-रतां पिनष्टु माम्
अदर्शनान्मर्म-हताम् करोतु वा
यथा तथा वा विदधातु लम्पटो
मत्प्राण-नाथस्तु स एव नापरः ॥८॥

আশ্লিষ্য বা পাদরতাং পিনষ্টু মাম্
অদর্শনান্মর্মহতাং করোতু বা।
যথা তথা বা বিদধাতু লম্পটো
মৎপ্রাণনাথস্তু স এব নাপরঃ।

তাৎপর্য  :-

চেতোদর্পণমার্জনং ভবমহাদাবাগ্নি-নির্বাপণং শ্রেয়ঃকৈরবচন্দ্রিকাবিতরণং বিদ্যাবধূজীবনম্।
 আনন্দাম্বুধিবর্ধনং প্রতিপদং পূর্ণামৃতাস্বাদনং সর্বাত্মস্নপনং পরং বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণসংকীর্তনম্।।১।।

অনুবাদঃ- চিত্তরূপ দর্পণের মার্জনকারী, ভবরূপ মহাদাবাগ্নি নির্বাপণকারী, জীবের মঙ্গলরূপকৈরবচন্দ্রিকা বিতরণকারী, বিদ্যাবধূর জীবনস্বরূপ, আনন্দ-সমুদ্রের বর্ধনকারী, পদে পদে পূর্ণামৃতাস্বাদনস্বরূপ এবং সর্বস্বরূপে শীতলকারী শ্রীকৃষ্ণ-সংকীর্তন বিশেষরূপে জয়যুক্ত হোননাম্নামকারি।

নাম্নামকারি বহুধা নিজসর্বশক্তি- স্তত্রার্পিতা নিয়মিতঃ স্মরণে ন কালঃ।
 এতাদৃশী তব কৃপা ভগবন্মমাপি দুর্দৈবমীদৃশমিহাজনি নানুরাগঃ।।২।।

অনুবাদঃ হে ভগবান! তোমার নামই জীবের সর্বমঙ্গল বিধান করেন। এইজন্য তোমার ‘কৃষ্ণ’, গোবিন্দাদি বহুবিধ নাম তুমি বিস্তার করেছ। সেই নামে তুমি তোমার সর্বশক্তি অর্পণ করেছ এবং সেই নাম স্মরণের কালাদি-নিয়ম (বিধি বা বিচার) কর নি। হে প্রভু! এইভাবে কৃপা করে জীবের পক্ষে তুমি তোমার নামকে সুলভ করেছ, তবুও আমার নামপরাধরূপ দর্দৈব এমনই প্রবল যে তোমার সুলভ নামেও আমার অনুরাগ জন্মাতে দেয় না।

তৃণাদপি সুনীচেন তরোরপি সহিষ্ণুণা।
 অমানিনা নানদেন কীর্তনীয়ঃ সদা হরিঃ।।৩।।

অনুবাদঃ ‍যিনি তৃণাপেক্ষা আপনাকে ক্ষুদ্র জ্ঞান করেন, ‍যিনি তরুর মত সহিষ্ণু হন, নিজে মানশূন্য হয়ে অপর লোককে সম্মান প্রদান করেন, তিনিই সর্বদা হরিকীর্তনের অধিকারী।

ন ধনং ন জনং ন সুন্দরীং কবিতাং বা জগদীশ কাময়ে।
 মম জন্মনি জন্মনীশ্বরে ভবতাদ্ভক্তিরহৈতুকী ত্বয়ি।।৪।।

অনুবাদঃ হে জগদীশ! আমি ধণ, জন বা সুন্দরী রমণী কামনা করি না; আমি কেবল এই কামনা করি যে, জন্মে জন্মে তোমাতেই আমার অহৈতুকী ভক্তি হোক।

অয়ি নন্দতনুজ কিঙ্করং পতিতং মাং বিষমে ভবাম্বুধৌ।
 কৃপয়া তব পাদপঙ্কজ স্থিতধূলীসদৃশং বিচিন্তয়।।৫।।

অনুবাদঃ ওহে নন্দনন্দন! আমি তোমার নিত্য কিঙ্কর (দাস) হয়েও স্বকর্মবিপাকে বিষম ভব-সমুদ্রে পড়েছি। তুমি কৃপা করে আমাকে তোমার পাদপদ্মস্থিত-ধূলিসদৃশ রূপে চিন্তা কর।

নয়নং গলদশ্রুধারয়া বদনং গদগদরুদ্ধয়া গিয়া। 
পুলকৈর্নিচিতং বপুঃ কদা তব নামগ্রহণে ভবিষ্যতি।।৬।।

অনুবাদঃ হে নাথ! তোমার নাম গ্রহণে কবে আমার নয়ন-যুগলে গলদশ্রুধারায় শোভিত হবে? বাক্য-নিঃসরণের সময়ে বদনে গদগদ-স্বর নির্গত হবে এবং আমার সমস্ত শরীর পুলকিত হবে?

যুগায়িতং নিমেষেণ চক্ষুষা প্রাবৃষায়িতম্। 
শূন্যায়িতং জগৎ সর্বং গোবিন্দবিরহেণ মে।।৭।।

অনুবাদঃ হে গোবিন্দ! তোমার অদর্শনে আমার ‘নিমেষ’-সমূহ ‘যুগ’ বৎ বোধ হচ্ছে, চক্ষুদ্বয় মেঘের মত অশ্রুবর্ষণ করছে এবং সমস্ত জগৎ শূন্যপ্রায় বোধ হচ্ছে।

আশ্লিষ্য বা পাদরতাং পিনষ্টু মা- মদর্শনান্মর্মহতাং করোতু বা। 
যথা তথা বা বিদধাতু লম্পটো মৎপ্রাণনাথস্তু স এব নাপরঃ।।৮।।

অনুবাদঃ এই পাদরতা দাসীকে কৃষ্ণ আলিঙ্গনপূর্বক পেষণ করুন, অথবা অদর্শন দ্বারা মর্মাহতই করুন, তিনি লম্পট পুরুষ, আমার সঙ্গে যে রকম আচরণই করুন না কেন, তিনি সর্বদা আমারই প্রাণনাথ।

  সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা পেতে  "ডাউনলোড করুন"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Top Ad

Your Ad Spot