শ্রাবণ মাস মানেই শিবের আরাধনার সময় ৷ শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালেন অনেকেই ৷ নিজের সংসার, সন্তানের মঙ্গল কামনায় শিবের পুজো চলে শ্রাবণ মাসভর ৷ কথায় বলে দেবাদিদেব মহাদেব ৷ অর্থাৎ সব ঈশ্বরের সেরা শিব ! সেই ঈশ্বরের পুজোয় সব মনস্কামনা পূরণ হবে ৷ শান্তি মিলবে জীবনে ৷
পুরাণ মতে এই শ্রাবণ মাসেই বিষ পান করেছিলেন শিব ৷ বিষ পানের ফলে তাঁর সারা শরীর নীল হয়ে যায় ৷ সেই কারণেই তাঁর মাথায় জল বা দুধ ঢেলে পুজো করা হয় ৷ শ্রাবণ মাসের প্রতিদিনই এই আচার পালন করা হয় ৷ তবে যে হেতু সোমবার শিবের বার বলেই পরিচিত, তাই সোমবারেই বিশেষ পুজো হয় ৷ শ্রাবণ মাসের ৪টি বা ৫টি সোমবার ধূমধাম করে পুজো করা হয় ৷ প্রচলিত বিশ্বাস শিবের পুজোয় দূর হয় জীবনের সব সমস্যা ৷
এই মাস তিন রাশির জীবনে নিয়ে আসবে সৌভাগ্যের বার্তা ৷ ধন-সম্পদে ফুলে ফেঁপে উঠবে এই তিন রাশির জাতক-জাতিকা ৷ শিবের আরাধনায় শিবভক্তদের পাশাপাশি এই তিন রাশির জীবনেও কেটে যাবে সকল বাধা-বিপদ ৷
শিবের পুজোয় কোনও জাতি বা লিঙ্গের বিভেদ নেই ৷ পুরুষ ও মহিলা সমানভাবে পুজো করে মহাদেবকে ৷ প্রচলিত মতে শিবের মতো স্বামীর কামনা করেন মহিলারা ৷ তাই অবিবাহিত মহিলারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিবের মতো 'বরের' আশায় এই পুজো করে থাকেন ! অন্যদিকে পুরুষরাও নিজেদের সুখ সমৃদ্ধির জন্য পুজো করে থাকেন ৷
তবে শ্রাবণে শিব পুজোর পিছনে সমাজবিজ্ঞানের কিছু ব্যখ্যা রয়েছে ৷ শিব মানেই সৃষ্টি ৷ শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি হয়, উর্বর হয়ে ওঠে জমি ৷ বপন, কর্ষণের জন্য আদর্শ সময় ৷ একদিকে যেমন জমিতে নতুন ফসল ফলানোর সময় এই শ্রাবণ মাস অন্যদিকে পশুপাখিদের মিলনের সময় এই মাস ৷ সেই কারণে অধিকাংশ ন্যাশনাল পার্কগুলো এই সময় বন্ধ থাকে ৷ শিব সৃষ্টির প্রতীক৷ তাই এই মাসে তিনি পূজিত হন ৷
মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলি: প্রথমেই বলতে হয়, মঙ্গলবার শ্রাবণ মাস শুরু হওয়ায় মঙ্গল গৌরীর পুজো অত্যন্ত ফলপ্রসূ ৷ আধ্যাত্মিক নিয়ম মেনে শ্রাবণের সোমবারের মতো মঙ্গলবার মঙ্গলগৌরীর পুজো করলে সংসারের সকল অমঙ্গল দূর হয় ৷
ভোলেবাবার বেলপাতা অত্যন্ত পছন্দের ৷ সোমবার মহাদেবের উদ্দেশ্যে তিনটি পাতাসহ বেলপাতা অবশ্যই নিবেদন করা উচিত ৷ তবে মাথায় রাখতে হবে, সেই বেলপত্র যেন ছিঁড়ে না যায় ৷ জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে, এই দিন বেলগাছ থেকেও বেল পাতা ছেঁড়া উচিত নয় ৷
যদি দেখেন, আপনার কাছে একটা বেলপত্র ভালো রয়েছে, তাহলে চিন্তা করবেন না ৷ ভগবান শিবকে অর্পণ করা বেলপাতা পুনরায় দিতে পারেন আপনি ৷ তবে প্রদত্ত বেলপত্র জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে ৷ তবেই পুনরায় তা নিবেদন করা যাবে ৷
পুজোর নিয়ম: অনেকে মন্দিরে গিয়ে শিবলিঙ্গে জল ঢেলে উপবাস করেন ৷ আবার অনেকে বাড়িতেই মহাদেবের আরাধনা করেন ৷ বাড়িতে পুজোর ক্ষেত্রে বিশেষ কয়েকটি নিয়ম মাথায় অবশ্যি রাখা উচিত ৷সোমবার সকালে প্রথমেই স্নান করে ঘরের প্রতিটি কোণে ছিটিয়ে দিন গঙ্গার জল ৷ মনে করা হয়, ভগবান শিবের আরাধনা করার আগে ঘর অবশ্যই শুদ্ধ করে নেওয়া উচিত ৷এরপর শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে বসতে হবে পুজোয় ৷শিবলিঙ্গে প্রথমে দই, তারপর মধু, দুধ ও গঙ্গাজল দিতে হবে ৷ এর সঙ্গে দেবেন সিদ্ধি ৷ সিদ্ধি ভোলেবাবার ভীষণ পছন্দের ৷এরপর পুজোতে বসে মহাদেবের প্রিয় ফুল যেমন, নীলকণ্ঠ, ধুতুরা, আকন্দ অবশ্যই রাখুন ৷ সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না বেল ফল ৷ধূপ, ধুনো, কপূর জ্বালাবেন ৷ আর শিবলিঙ্গে সাদা চন্দনের তিলক এঁকে দেবেন ৷ লাল চন্দন ভুলেও দেবেন না ৷ লাল চন্দন মূলত ব্যবহৃত হয় দেবীদের পুজোর উদ্দেশ্যে ৷ভোলেনাথের সামনে প্রার্থনা করুন ৷শিবলিঙ্গের সামনে এই মন্ত্রটি ১০৮ বার জপ করুন – ‘ওম নমঃ শিবায়’ ৷এবার প্রসাদ বিতরণ করুন এবং নিজে প্রসাদ গ্রহণ করুন।ভগবান শিবের সামনে শিব চালিসা পাঠ করতে পারেন। অত্যন্ত শুভ ও ফলপ্রসূ হবে।
কী করবেন না: পুরো শ্রাবণ মাস জুড়ে অনেকেই নিরামিষ গ্রহণ করে থাকেন ৷ তবে যারা নিরামিষ খাচ্ছেন না, তাঁরা সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র সোমবার করে নিরামিষ আহার করুন ৷ পেঁয়াজ, রসুন ছাড়াও সোমবার এড়িয়ে চলুন সরষের তেল, মুসুর ডাল ও বেগুন ৷
কোন কোন রাশি এই সময়ে বিশেষ সুফল পাবেন: - জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, বৃষ, মিথুন ও কর্কট রাশি এই সময়ে মহাদেবের বিশেষ আশীষ লাভ করবেন ৷বৃষ রাশির জাতক জাতিকারা ভক্তিভরে শিবের আরাধনা করলে অর্থ সৌভাগ্য ভালো হবে ৷মিথুন রাশির জাতক-জাতিকারা এই সময় গাড়ি-বাড়ি কেনার কথা ভেবে থাকলে এগোতে পারেন ৷ এই সময়ে মনোবাঞ্ছা পূরণ হওয়ার সম্ভবনা প্রবল ৷কর্কট রাশির জাতক-জাতিকাদের ক্ষেত্রে এই সময় না হওয়া কাজও হতে যেতে পারে ৷ যোগ রয়েছে অর্থপ্রাপ্তিরও ৷

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন