কেউ মরে গেলে কারও ১০ দিন, কারও ১২ কারও ১৫ বা ৩০ দিন অশৌচ কেন??
মনুসংহিতার বিধান অনুযায়ী পুরোহিত দর্পনে নির্দেশ দেওয়া আছে —
শুধ্যেদ্বিপ্রো দশাহেন দ্বাদশাহেন ভূমিপ।
বৈশ্যপঞ্চদশাহেন শূদ্রো মাসেন শুধ্যতি।।
- ইতি মনুঃ।।
অনুবাদ: জন্ম বা মরণে ব্রাহ্মণের দশদিন, ক্ষত্রিয়ের বারো দিন, বৈশ্যের পনেরো দিন এবং শূদ্রের একমাস অর্থাৎ ত্রিশ দিন অশৌচ থাকে; ইহার পর শুদ্ধ হয়। তবে, বর্তমানে বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে অনেকেই এগারো বা বারো দিনে অশৌচ পালন করে। অন্যদিকে, ব্রাহ্মণ পরিবারের লোকেরা দশ দিনের জন্য অশৌচ পালন করে।
তবে, শাস্ত্র মতে সকল বর্ণে অন্তত দশম অশৌচ (১০ দিন) পর্যন্ত পালনের বিধান রয়েছে।
অশৌচ পালনের তারতম্য দেখা যায়, তার কারণ - তখন কার ব্রাহ্মণরা ছিলেন ব্রহ্ম জ্ঞানী পরিবারের কেউ বিয়োগ হইলে খুব তাড়াতাড়ি ভগবানের চিন্তায় মনোনিবেশ করতে পারেন তাই অল্প দিনের অশৌচ পালনের বিধান।
ক্ষত্রিয়রা দেশ পরিচালনা করতেন, দেশের জন্য আত্মত্যাগ তার প্রধান কার্য যার ফলে স্ত্রী পুত্র পরিবারের প্রতি মোহ কম থাকায় ১২ দিনের অশৌচ পালনের বিধান দেওয়া হয়েছে।
বৈশ্যশ্রণীভুক্তরা ব্যাবসা বানিজ্য জন্য দুরদুরান্তে যেতে হতো এর ফলে আবার গৃহে ফিরে আসবো কিনা অনিশ্চিত ছিল তাই পরিবারের প্রতি মোহ কিঞ্চিৎ কম থাকায় ১৫ দিনের মধ্যে অশৌচ পালনের বিধান রাখা হয়েছে।
শুদ্র জাতি গৃহের মধ্যে স্ত্রী, পুত্র, পরিবার নিয়ে নিশ্চিতে বসবাস করতেন আর সকলের প্রতি অত্যাধিক আসক্তির ফলে ৩০ দিনের বিধান রাখা হয়েছে। অতএব অশৌচ পালনের মূল উদ্দেশ্য জড় জগতের মায়া মোহ কাটিয়ে দেবদেবীর পূজা যোগ্যতা অর্জন করা । যারা গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী তাদের কোন বিধান নেই কারণ সকলের মোহ কাটিয়ে পরমব্রহ্মের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন তাই সকল সময় শুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন