ভাগবত ও পুরাণ পাঠ

ভাগবত ও পুরাণ পাঠ :গৌর গদাধর সম্প্রদায় (সাটুই , মুর্শিদাবাদ)

Breaking

Post Top Ad

১৪ আগস্ট ২০২৪

পিতৃপক্ষ​ - তর্পণ

 পিতৃপক্ষ পূর্বপূরুষের তর্পণাদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ পক্ষ। হিন্দুধর্ম মতে, পিতৃপক্ষ (সংস্কৃত: पितृ पक्ष) পূর্বপূরুষের তর্পণাদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ পক্ষ। আমাদের কাছে যা সাধারণত "মহালয়া" নামে পরিচিত। এই পক্ষ পিত্রুপক্ষ, ষোলা শ্রাদ্ধ, কানাগাত, জিতিয়া, মহালয়া পক্ষ ও অপরপক্ষ নামেও পরিচিত।

পিতৃপক্ষ পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জলপ্রদান। শুরু ভাদ্র পূর্ণিমা তিথি এবং সমাপ্তি মহালয়া (সর্বপিতৃ অমাবস্যা তিথি)।
সনাতন ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী, যেহেতু পিতৃপক্ষে প্রেতকর্ম (শ্রাদ্ধ), তর্পণ ইত্যাদি মৃত্যু-সংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়, সেই হেতু এই পক্ষ শুভকার্যের জন্য প্রশস্ত নয়। দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে গণেশ উৎসবের পরবর্তী পূর্ণিমা (ভাদ্রপূর্ণিমা) তিথিতে এই পক্ষ সূচিত হয় এবং সমাপ্ত হয় সর্বপিতৃ অমাবস্যা, মহালয়া অমাবস্যা বা মহালয়া দিবসে।
শাস্ত্রে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, পিতৃপক্ষ থেকে মুক্তি পেতে এবং জীবনে তাদের আশীর্বাদ পেতে প্রতি বছর আপনার পূর্বপুরুষ এবং পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পিতৃপক্ষ শুরু হওয়ার সাথে সাথে, আমরা ভেবেছিলাম যে আমরা আপনাকে আপনার পূর্বপুরুষদের সঠিক উপায়ে স্মরণ করতে সাহায্য করব!
আপনার পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এখনই গুরুত্বপূর্ণ সময়।
4টি প্রধান পূজা যা আপনাকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং আপনার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে প্রচুর আশীর্বাদ পেতে সাহায্য করবে নীচে উল্লেখ করা হয়েছে।
দ্রষ্টব্য: আপনি যদি আপনার পূর্বপুরুষের পুণ্যতিথি জানেন তবে সেই দিন পূজা করুন।
সর্ব পিতৃ অমাবস্যা পিতৃ পূজা পিতৃর শেষ দিনে হবে। যদি আপনি তিথি বা তারিখটি জানেন না যে তারিখে আপনার পূর্বপুরুষ মারা গেছেন, আপনি অমাবস্যায় শ্রাদ্ধ পূজা করতে পারেন- পিতৃপক্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন।
1. শ্রাদ্ধ পূজা: একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক... নির্দিষ্ট-সমস্যা-রাশিফল সর্ব দোষ মুক্তি পূজা।
2. পিতৃ দোষ পূজা: একটি পুরো দিনব্যাপী পূজা যা পিতৃ দোষের অভিশাপ থেকে একজনকে মুক্তি দিতে আপনার পূর্বপুরুষদের নামে করা হবে।
3. পিতৃ গায়ত্রী: ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের দ্বারা 108টি পুঁতির 11 মালা পিত্র গায়ত্রী মন্ত্রের অত্যন্ত কার্যকরী মন্ত্র জপ থেকে।
4. পিতৃ তর্পণ: মুক্তি দিতে আপনার পূর্বপুরুষদের নামে করা হবে।
পিতৃপক্ষীয় শ্রাদ্ধ ও তর্পন এবং ষোড়শ পিণ্ড দান - এই দিন করা প্রত্যেকের পিতৃ পুরুষের জন্য উচিত। 
পিতৃপক্ষে পিতৃপুরুষগণকে স্মরণ 
12 মাসে 24 টি পক্ষ রয়েছে, তার মধ্যে 2টি পক্ষ বিশেষ তাৎপর্য্যপূর্ণ। প্রথমটি পিতৃপক্ষ ও দ্বিতীয়টি দেবীপক্ষ। আশ্বিনের কৃষ্ণ পক্ষের তিথীকে বলা হয় মহালয়া। এই কৃষ্ণ পক্ষকে বলা হয় অপরপক্ষ কিংবা পিতৃপক্ষ।
পিতৃপক্ষে স্বর্গত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পার্বন শ্রাদ্ধ ও তর্পন করা হয়। যমালয় থেকে মর্ত্যলোকে এ সময় পিতৃ পুরুষেরা আসেন। তাদেরকে তৃপ্ত করার জন্য তিল, জল, দান করা হয়। এবং তাহাদের যাত্রাপথকে আলোকিত করার জন্য উল্কাদান করা হয়।
এই অমাবস্যায় পিতৃপূজা সেরে পরের পক্ষে দেবীপূজায় প্রবৃত্ত হতে হয়। তাই দেবীপূজার পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ বা মাতৃপক্ষ, মহালয়া হচ্ছে পিতৃপক্ষের শেষ দিন এবং দেবী পক্ষের শুরুর পূর্ব দিন পিতৃপক্ষে আত্নসংযম করে দেবী পক্ষে শক্তি সাধনায় প্রবেশ করতে হয়। দেবী শক্তির আদিশক্তি, তিনি সর্বভূতে বিরাজিত। তিনি মঙ্গল দায়িনী করুনাময়ী। সাধক সাধনা করে দেবীর বর লাভের জন্য, দেবীর মহান আলয়ে প্রবেশ করার সুযোগ করেন বলেই এ দিনটিকে বলা হয় মহালয়া।
মহালয়ার পর প্রতিপদ তিথি থেকে দেবী বন্দনা শুরু হয়। কোন কোন অঞ্চলে দেবীর আরাধনা প্রতিপদ থেকে শুরু হয়।
পিতৃপক্ষে পিতৃপুরুষগণকে স্মরণ করা হয়। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা পালন করা হয়। এই সময় ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় পিতৃলোক থেকে পৃথিবীলোক পর্যন্ত এক জ্যোতির্ময় রাস্তা খোলা থাকে। যতজন পিতৃপুরুষের এখনো জন্ম হয় নি, তাঁরা এই রাস্তা ধরে আমাদের একদম সামনে আসতে সমর্থ হয় এবং আমরা শ্রদ্ধা সহকারে নাম ও গোত্র ধরে যাহাই নিবেদন করি তাহাই তাঁরা সবকিছু প্রাপ্ত হন।
প্রত্যেক ব্যাক্তির ( যাদের পিতা -মাতার মৃত্যু হয়েছে) এই পিতৃপক্ষে পিতৃতর্পণাদি করা পরম কর্তব্য। এই কর্তব্য যিনি করেন তাঁর বহু পাপের বিনাশ হয়, বহু পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার প্রয়োজন হয়না এবং কুন্ডলীগত বহু দোষ আপনা থেকেই কেটে যায়।
আর সাধক ব্যাক্তিদের শুভ ফল বৃদ্ধি হেতু সাধনার প্রভাব উন্নতির দিকে ত্বরান্বিত হয়।
পিতৃপক্ষের যে কোনো কর্মের লোহার বাসন ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং তার সঙ্গে পশু -পাখিদের খাওয়ানো কর্তব্য। এই পিতৃপক্ষের সময় যেকোনো নেশা জাতীয় খাদ্য , দূষিত খাদ্য এবং অশাস্ত্রীয় কেউ কর্ম বর্জন করা উচিত। তবেই উপরোক্ত সমস্ত সৎফল প্রাপ্ত হওয়ার উপযুক্ততা লাভ হয়।

তর্পণ ও পার্ব্বণ শ্রাদ্ধ
বিভিন্ন পরিস্থিতির চাপে ও বিভিন্ন কারনে আমাদের সনাতন ধর্মালম্বীদের অনেক আচার-অনুষ্ঠান প্রায় লুপ্ত, পিতৃ তর্পণ ও তেমনই একটি, বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছে আজ তার অর্থ অজানা। বর্তমান দিনে অনেকেই আবেগের বশে পিতৃতর্পণ করে থাকেন কিন্তু কি করছেন বা কিসের জন্যই বা করছেন তা রয়ে যাচ্ছে অজানা,আসুন জেনে নিই কিছু অজানা তথ্য এই তর্পণ বিষয় নিয়ে!!!!
গত ২২ শে আগষ্ট২০২০ গনেশচতুর্থী উদযাপন হয়ে গেল, আগামী ১লা সেপ্টেম্বর২০২০ অনন্তচতুর্দশীর পুন্যলগ্নে গনেশ উৎসব পালিত হবে। তারপরের দিন থেকেই অর্থাৎ ২রা সেপ্টেম্বর বুধবার ইং ২০২০ থেকে ১৭ই সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৬ চান্দ্রদিবস ব্যাপি পিতৃপক্ষ কাল শুরু হবে।।
সাধারনত এক পক্ষ চান্দ্রমাসের ১৫টি তিথি কিন্তু এই পিতৃপক্ষে চান্দ্রের ষোলকলা ধার্য করে পিতৃপক্ষ কাল পালনীয়!!( পূর্ণিমা থেকে অমাবস্যা মোট ষোলটি তিথি) যদিও এবিষয়ে "অত্রকার্য্যে নিরবকাশে ন বহু সম্মত" বলে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে।।
যাইহোক পিতৃপক্ষ কি? এবং কেন এই পক্ষকাল হিন্দু ধর্মের মানবজাতির কাছে গুরুত্বপূর্ণ তা জানার প্রয়োজন আছে!!
চান্দ্র ভাদ্র মাসের পূর্ণিমার তিথি থেকে পরের অমাবস্যা বা মহালয়ার(দেবীর আগমনের সুচনা তিথি) দিন পর্যন্ত দিন গুলিকে পিতৃপক্ষ বলা হয়েছে, হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রীয় তথ্যসুত্র অনুসারে এই পিতৃপক্ষের সময়ে স্বর্গত পিতৃপুরুষেরা যমালয় থেকে মর্ত্যলোকে আসেন তাঁদের বংশধরের কাছে অন্ন জল গ্রহন করতে, তাদেরকে এই অন্ন জল প্রদান করার বিধির নামই পার্বনশ্রাদ্ধ ও তর্পণ বিধি।। সেই সময় তারা নিজ বংশধরের প্রদত্ত অন্ন জল তিলাঞ্জলী গ্রহন করে পরিতৃপ্ত হন এবং নিজ বংশের উত্তরাধিকারীদের আর্শীবাদ প্রদান করেন।।
পার্ব্বণ শ্রাদ্ধ বা তর্পনের শাস্ত্রীয় বাখ্যা কি??
তর্পণ শব্দের ব্যুত্পত্তি হল তৃপ + অনট, তৃপ্ ধাতুর অর্থ তৃপ্তি সাধন করা, এখানে তৃপ্তি সাধন বলতে দেব-ঋষি- পিতৃ-মনুষ্যগণের তৃপ্তিসাধনকে বোঝানো হয়েছে।।সাধারণভাবে মৃত পূর্বপুরুষগণকে জলদান করাকেই তর্পণ বলা হয়।। আমরা মহাভারতের যুদ্ধোত্তর পর্ব্বে জানতে পারি যে, মহাবীর কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে সেখানে তাঁকে খেতে দেওয়া হয় শুধু সোনা আর ধনরত্ন। তার কারণ কর্ণ যখন ইন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করলেন তখন ইন্দ্র বললেন হে দানবীর কর্ণ তুমি সারাজীবন শুধু সোনাদানাই দান করেছো এবং পিতৃপুরুষকে অন্ন জলদান করোনি তাই এই অবস্থা। তার উত্তরে কর্ণ বলেন যে তাঁর পিতৃপুরুষের পরিচয় আমি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর আগের রাতেই জানতে পেরেছিলাম, যখন পান্ডবমাতা কুন্তী এসে আমার জন্ম কাহিনির পরিচয় দেন কিন্তু কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভ্রাতা অর্জুনের হাতেই আমার শরীরের মৃত্যু হয়। সেই হেতু পিতৃতর্পণ আমি করতে পারি নাই। তখন ইন্দ্র বুঝলেন যে এতে কর্ণের কোন দোষ নেই। তিনি কর্ণকে পনেরো দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দিতে অনুমতি দেন। ইন্দ্রের কথা মতো এক পক্ষকাল ধরে মহাবীর কর্ণ মর্ত্যে অবস্থান করে জেষ্ঠ্যপুত্রের কর্তব্য পালন করে পিতৃপুরুষদের অন্নজল প্রদান করেন ও নিজের পাপ দূর করেন। সেই পক্ষটিই পরিচিত হল পিতৃপক্ষ নামে। এই পিতৃ তর্পণের পরিচয় মার্কণ্ডেয় পুরাণেও পাওয়া যায় সেখানে বলা হয়েছে যে পিতৃগণ শ্রাদ্ধে তুষ্ট হলে স্বাস্থ্য, ধন, জ্ঞান ও দীর্ঘায়ু এবং পরিশেষে উত্তরপুরুষকে স্বর্গ ও মোক্ষ প্রদান করেন।
হিন্দুধর্মে পার্ব্বণ শ্রাদ্ধ ও তর্পণ কেন করণীয়??
তর্পণ একটি নিত্যকর্ম।। তর্পণ প্রতিদিনই করা উচিত শাস্ত্রে উল্লিখিত হয়েছে যে নিত্যকর্ম না পালন করলে তার প্রত্যবায় ঘটে বা অপরাধ হয় সোজা কথায় পাপ হয় তাই নিজের পাপমুক্তির জন্য অবশ্য কর্তব্য পালন রূপে মানব জাতিকে এই পিতৃতর্পণ করা উচিত।। হিন্দু শাস্ত্রানুসারে দেহের বিনাশ হলেও আত্মার বিনাশ হয় না,তাই আমাদের পিতৃগণের দেহে যে আত্মা ছিলেন তিনি এখন যে শরীরেই অবস্থান করুন সেই শরীরেই জলক্রিয়া ও শ্রাদ্ধের দ্বারা তিনি তৃপ্তি লাভ করে থাকেন, শাস্ত্রমতে তর্পণ জলের ও শাস্ত্রীয় দ্রব্যের পরমাণু অর্থাত্ সূক্ষ্মতম কণা মন্ত্রবলে তাঁর বর্তমান দেহের ভক্ষ্য বস্তুর পর মাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে থাকে তাই দেব-ঋষি-পিতৃ- মনুষ্যগণের তর্পণ করলে তাঁরা খুশি হন ও বিনিময়ে তাঁরা আমাদের সুখ,সমৃদ্ধি, সাফল্য,পরিপাকশক্তির বৃদ্ধি ও দীর্ঘায়ু দান করেন।।
তর্পণাদি কার্য্যে কি সকলেরই অধিকার আছে?
হ্যাঁ,৷ পিতৃ মাতৃ বিয়োগান্ত ব্যক্তিমাত্রেরই তর্পন করা বিধেয়, যদি কোন কারনবশতঃ পিতা মাতা জীবিতকালে পিতৃপক্ষে স্বীয় পুর্বপুরুষের তৃপ্তির কামনায় তর্পন করতে অসমর্থ হন,সেক্ষেত্রে পৌত্রাদিগন অবশ্য কর্তব্য রুপে স্বীয় পুর্বপুরুষের তৃপ্তির জন্য তর্পণ করতে পারেন।। (স্মৃতি চিন্তামনি ২৯৪ পৃঃ)
তর্পণ কিভাবে করবেন ও কখন কার জন্য করবেন??
আচার্য বৌধায়নের মতে নদীতীরে তর্পণ করাই শ্রেয়।তবে প্রতিষ্ঠিত পুষ্করিণী বা স্থলেও তর্পণ করা যায়,স্থলে তর্পণ করলে তর্পণজল তামার পাত্রে ফেলতে হবে এবং শেষে তা নদী, পুষ্করিণী বা পবিত্র স্থানে ফেলতে হবে।। এটিই স্মার্ত্তবিধান প্রচলিত।। পুর্বপুরুষের বিদেহী আত্মার তুষ্টিবিধান করার জন্য যারা গয়াপিন্ড দান করেছেন তারাও এই পিতৃপক্ষ সময়ে সেই পুর্বপুরুষের মৃততিথির দিবসে বা শেষদিবস অর্থাৎ অমাবস্যায় অবশ্যই তিলাঞ্জলী প্রদান করবেন।। তাম্রপাত্রে গঙ্গাজল,তিল,কুশ, হরিতকী, তুলসীপাতা, সাদা ফুল নিয়ে নাভীপ্রমান নদী বা পুস্করিণীতে জলে মধ্যে দাঁড়িয়ে ব্রাহ্মণ মুখনিঃসৃত মন্ত্রোচ্চারণ শ্রবন করে যথাবিধি পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পন করা বিধেয় তবেই তা ফলপ্রসু হয়।।
পিতৃপক্ষে কি শুধু পিতৃতান্ত্রিক তর্পণ করা হয়???
না, শুধুমাত্র পিতৃতর্পণই এসময়ে করা হয় না, তর্পণের শুরুতেই করা হয় *দেব-তর্পণ* এই মন্ত্রে ‘ওঁ ব্রহ্মা তৃপ্যতাম্।। ওঁ বিষ্ণুস্তৃপ্যতাম্।ওঁ রুদ্রস্তৃপ্যতাম্।। ওঁ প্রজাপতিস্তৃপ্যতাম্।
এই চার জন ছাড়াও মন্ত্র ও জল দ্বারা দেব, যক্ষ, নাগ, গন্ধবর্ব, অপ্সরা, অসুর, ক্রুরস্বভাব জন্তু, সর্প, সুপর্ণ যা হল গরুড়জাতীয় পক্ষী ও বৃক্ষ, সরীসৃপ, সাধারন পক্ষী, বিদ্যাধর কিন্নর, জলচর, খেচর, ভূত এবং পাপে ও ধর্মকার্য্যেরত যত জীব আছে, তাহাদের তৃপ্তির জন্য তর্পণ করা হয় ।
দেবতর্পণের পর করা হয় *ঋষি-তর্পণ* যার মন্ত্রের অর্থ কিছুটা এই সনক, সনন্দ, সনাতন, কপিল, আসুরি, বোঢ়ু ও পঞ্চশিখ আপনারা সকলে আমার প্রদত্ত জলে সর্বদা তৃপ্তিলাভ করুন, এবং মন্ত্র ও জল দ্বারা আমরা মরীচি, অত্রি,অঙ্গিরা,পুলস্ত, পুলহ, ক্রতু,প্রচেতা, বশিষ্ঠ, ভৃগু ও নারদ প্রভৃতি ঋষি গনের তর্পণ করি।
এরপর *দিব্য-পিতৃ-তর্পণে* আমরা নিজ নিজ পুর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে সাতটি মন্ত্র দ্বারা প্রত্যেককে এক এক অঞ্জলি সতিল জল দিব্য পিতৃ গনের উদ্দেশ্যে দান করে থাকি।মন্ত্রে বলা হয়, হে আমার পূর্ব্বপুরুযগণ আসুন, এই অঞ্জলি পরিমিত জল গ্রহণ করুন, পিতৃপুরুষগনকে ও স্বর্গত পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতামহ, প্রমাতামহ, বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহী, মাতামহী, প্রমাতামহী, বৃদ্ধপ্রমাতামহী, গুরু, জ্যেঠা, খুড়া, বিমাতা, ভ্রাতা, ভগ্নী, জ্যেঠী, খুড়ী, পিসি,মাসী, মাতুল, মাতুলানী, শ্বশুর, শাশুড়ী, ভগ্নিপতি, জ্ঞাতি, আদি যতজন যে সকল দেহত্যাগ করেছেন তাঁদের সকলের নামে ভক্তি শ্রদ্ধা অর্পণ করে তর্পণ করা হয়।
তর্পণের সবচাইতে সুন্দর যে অংশটি যা আমাকে অতিশয় অভিভূত করে সে হল আমার বংশে যে সকল জীব অগ্নিদ্বারা দগ্ধ হয়েছেন বা যাদের দাহাদি সংস্কার হয়েছে বা যারা দগ্ধ হন নাই কিংবা কেউই তাদের দাহাদি-সংস্কার কার্য্য করে নাই তাদেরও তৃপ্তি ও স্বর্গ লাভের জন্যে
ওঁ নমঃ অগ্নিদদগ্ধাশ্চ যে জীবা... এই মন্ত্র সহকারে জল দান করা এবং
ওঁ নমঃ যে বান্ধবা অবান্ধবা বা... ইতি মন্ত্রে আমাদের যে সকল আমাদের বন্ধু ছিলেন এবং যে সকল আমার বন্ধু নন, যে সকল জন্ম-জন্মান্তরে আমাদিগের বন্ধু ছিলেন, এবং যারা আমাদের নিকট হইতে জলের প্রতাশা করেন, তাঁদের সম্পূর্ণরূপে তৃপ্তি লাভের জন্যে ও তর্পণ করা হয়। এরপর আমরা করি *ভীষ্ম-তর্পণ* এই মন্ত্রের অর্থ কিছুটা এই যে বৈয়াঘ্রপদ্য যার গোত্র,সাঙ্কৃতি যার প্রবর, সেই অপুত্রক ভীষ্মবর্ম্মাকে এই জল দিচ্ছি।শান্তনু-তনয় বীর, সত্যবাদী, জিতেন্দ্রিয় ভীষ্মবর্ম্মা এই জল দ্বারা পুত্র-পৌত্রচিত তর্পণাদি-ক্রিয়া-জনিত তৃপ্তি লাভ করুন।
ভীষ্ম-তর্পণের পর করা হয় *রাম-তর্পণ* সম্পূর্ণ তর্পণ করা সম্ভব না হলে শুধু এই তর্পণ করলেই হয় বলে বিশ্বাস প্রচলিত, রামায়ণে শ্রীরামচন্দ্র বনবাস কালে এই মন্ত্রেই তর্পণ করেছিলেন বলে বর্ণিত আছে। রাম তর্পণ মন্ত্রের তাৎপর্য এই যে ‘ব্রহ্মলোক অবধি যাবতীয় লোক সমীপে অবস্থিত জীবগণ,যথা যক্ষ, নাগাদি, দেবগণ, যথা ব্রহ্মা , বিষ্ণু, শিব প্রভৃতি, ঋষিগণ যথা মরীঢি, অত্রি, অঙ্গিরাদি, পিতৃগণ,মনুষ্যগণ সনক, সনন্দ প্রভৃতি, পিতৃ- পিতামহাদি এবং মাতামহাদি সকলে তৃপ্ত হোন।আমার কেবল এই জন্মের নয়, আমার বহুকোটিকুল, বহু জন্মান্তরে গত হয়েছেন, সেই সকল কুলের পিতৃ-পিতামহাদি, সপ্তদ্বীপবাসী যথা জম্বু, প্লক্ষ, শাল্মলি, কুশ, ক্রৌঞ্চ, শাক, পুষ্কর, সমুদয় মানবগণের পিতৃ-পিতামহাদি এবং ত্রিভুবনের যাবতীয় পদার্থ আমার প্রদত্ত জলে তৃপ্ত হোন। তারপরে করা হয় *লক্ষণ-তর্পণ* বলা হয়েছে যে রাম-তর্পণেও অশক্ত হলে এই তর্পণ করা হয়, কারণ বনবাসকালে রাম ও সীতার সেবায় ব্যাস্ত থাকার সময় সময়াভাবে, লক্ষণ শুধু যে মন্ত্রে তর্পণ করতেন তার অর্থ হল—‘ব্রহ্মা হইতে তৃণ পর্যন্ত সমস্ত জগৎ, জগতের লোক, স্থাবর জঙ্গমাদি, সকলে তৃপ্ত হোন’।তারপর বস্ত্র নিংড়ানো জলে যাদের কেউ কোথাও নাই তাদের তর্পণ করা হয়, সেই মন্ত্রের বাংলায় যার অর্থঃ—‘যারা আমাদের বংশে জন্মে পুত্রহীন ও বংশহীন হয়ে গত হয়েছেন, তারা আমার এই বস্ত্র-নিংড়ানো জলে তৃপ্ত হোন। তারপর ওঁ নমঃ পিতা-স্বর্গঃ পিতা-ধর্ম্মঃ..মন্ত্রে করা হয় পিতৃস্তুতি!! যার অর্থ..পিতাই স্বর্গ, পিতাই ধর্ম্ম, পিতাই পরম তপস্যা অর্থাৎ পিতা সেবাই তপস্যা, পিতা প্রসন্ন হইলে সকল দেবতাই প্রীত হন!!
এরপর, পিতৃপ্রণাম করা হয় যে মন্ত্রে তার অর্থ এই যে ‘যাঁহারা স্বর্গে মূর্ত্তি ধারণ করিয়া বিরাজ করছেন, যারা শ্রাদ্ধান্ন ভোজন করেন, যাদের নিকট অভীষ্ট-ফলের কামনা করলে যারা সকল বাঞ্ছিত-ফল দান করতে সমর্থ এবং কোন ফলের কামনা না করলেও যারা মুক্তি প্রদান করতে সক্ষম , সেই পিতৃগণকে প্রণাম করি’।
এরপর সূর্য্যদেবের উদ্দেশে পূর্ব্বদিকে মুখ করে ওঁ নমো বিবস্বতে ব্রহ্মণ, ভাস্বতে... মন্ত্রে জল দেওয়া হয়, তারঅর্থ- হে পরম ব্রহ্মস্বরূপ সবিত্রিদেব ! আপনি তেজস্বী, দীপ্তিমান ; বিশ্বব্যাপী তেজের আধার, জগতের কর্ত্তা, পবিত্র, কর্ম্মপ্রবর্ত্তক; আপনাকে প্রণাম করি।
জোড় হাতে বলা হয়- ওঁ নমঃ জবাকুসুম-সংঙ্কাশং, কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং... মন্ত্রে প্রণাম জানানো হয় সূর্য্যদেবকে যার অর্থ—জবাফুলের ন্যায় রক্তবর্ণ, কশ্যপের পুত্র, অতিশয় দীপ্তশালী, তমোনাশী, সর্ব্বপাপ নাশকারী দিবাকরকে প্রণাম করি। এবং সর্বশেষে অচ্ছিদ্রাবধারণ, বৈগুণ্য-সমাধান ও জপের দ্বারা আমরা তর্পণের সমাপ্তি করে থাকি। নানান শাস্ত্রীয় তথ্য প্রমান সংগ্রহ করে প্রাঞ্জলতা সহকারে আপনাদের কাছে হিন্দু ধর্মের সংস্কৃতির আলোকে পিতৃপক্ষের তর্পণাদি বিষয় উপস্হাপনের চেষ্টা করলাম।। আশা করছি সকলে মিলে দায়িত্বশীল ভাবে নিজের সংস্কৃতি ও পিতৃপুরুষের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে প্রচেষ্টা করবেন এবং অবশ্য কর্তব্য রুপে পিতৃতর্পণ করবেন।।বর্তমান দিনে পিতৃপক্ষে কিছু সংখ্যক মানুষের তর্পণের আগ্রহ দেখে মনে হয় যে আমাদের কাছে আমাদেরই পূর্বজদের অনুষ্ঠিত কিছু আচার অনুষ্ঠান এখনও সমাদৃত আছে।
তর্পণ কি?
ভারতকোষ অনুযায়ী “ জলের দ্বারা কৃত পিতৃপুরুষ এবং দেবতাদের তৃপ্তি বিধায়ক একটি অনুষ্ঠান”, একে অনেকে পিতৃযজ্ঞও বলে থাকেন। এই যজ্ঞ অনুষ্ঠানে ব্রহ্মা, বিষ্ণু,শিব প্রমুখ দেবতা, সনক-সনন্দ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সপ্তর্ষি, চতুর্দশ যম ও দ্বাদশ পূর্বপুরুষ (পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতামহ, প্রমাতামহ, বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহী, মাতামহী, প্রমাতামহী ও বৃদ্ধপ্রমাতামহী) এবং ত্রিভুবনের উদ্দেশ্যে জল দেওয়া হয়। পিতৃপক্ষের সময় তিলতর্পণ অনুষ্ঠিত হয়, অর্থাৎ তিল-মেশানো জলে তর্পণ হয়। তর্পণ শাস্ত্রমতে নিত্যকর্তব্য, তবে আজকের এই জেট যুগে রোজ বাপ-ঠাকুরদাদের স্মরণ করা সম্ভব হয় না বলে, লোকে পিতৃপক্ষে এবং বিশেষ করে - সর্বপিতৃ অমাবস্যায় (যে দিনটিকে আমরা ‘মহালয়া’ বলে থাকি) তিলতর্পণ করেই পিতৃকৃত্য সেরে থাকে।
এই সম্পর্কে একটি সুন্দর গল্প আছে – মহাভারতের যুদ্ধের সময়ে মহাবীর কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে খাবারের পরিবর্তে তাঁকে শুদুই খেতে দেওয়া হল সোনা, আর অনেকরকমের ধনরত্ন। কর্ণ অবাক হয়ে এর কারন জিজ্ঞেস করেন ইন্দ্রকে (মতান্তরে যমরাজকে)। তখন ইন্দ্র তাঁকে বললেন – দেখ বাপু তুমি তো সারাজীবন শুধু সোনাদানা মানে ধনরত্ন বিলিয়েছ, পিতৃ পুরুষকে জল দাওনি, তাই তোমার জন্যে এই ব্যবস্থা। তখন মহাবীর কর্ণ বললেন – “এতে আমার কি দোষ? আমি তো আমার প্রকৃত পিতৃ পুরুষের কথা জানতে পারলাম এই সেদিন। এর আগে তো অধিরথকেই নিজের পিতা বলে জানতাম। যুদ্ধ শুরুর আগেরদিন রাতে মাতা কুন্তী এসে বললেন আমি নাকি তাঁর ছেলে, শ্রীকৃষ্ণও তাঁহাই বললেন। পরবর্তী কালে যুদ্ধে নিজের ভাইয়ের হাতেই মরতে হল, পিতৃ তর্পণের আর সুযোগ বা সময় পেলাম কই? ইন্দ্র বুজতে পারলেন এতে কর্ণের কোন দোষ নেই। তাই তিনি কর্ণকে পনেরো দিনের জন্যে মর্ত্যলোকে ফিরে জাবার অনুমতি দিলেন আর বললেন এই এক পক্ষকাল তিনি যেন মর্ত্যলোকে অবস্থান করে পিতৃ পুরুষকে জল দেন, এতেই তাঁর পাপস্খালন হবে। যে পক্ষকাল কর্ণ মর্ত্যে এসে পিতৃপুরুষকে জল দিলেন সেই পক্ষটি পরিচিত হল পিতৃপক্ষ নামে। সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষের সূচনা হয়। হিন্দু মতে, এই সময় আমাদের স্বর্গত পিতৃপুরুষগণ স্বর্গলোক ছেড়ে নেমে আসেন মর্ত্যলোকে, এই সময় প্রথম পক্ষেই হিন্দুদের পিতৃতর্পণ করতে হয়। মহালয়া পক্ষের পনেরোটি তিথির নাম হল প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী ও অমাবস্যা।
তর্পণ বিধি
পিতৃপক্ষে পুত্র কর্তৃক শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হিন্দুধর্মে অবশ্য করণীয় একটি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের ফলেই মৃতের আত্মা স্বর্গে প্রবেশাধিকার পান। এই প্রসঙ্গে গরুড় পুরাণ গ্রন্থে বলা হয়েছে, “পুত্র বিনা মুক্তি নাই।” ধর্মগ্রন্থে গৃহস্থদের দেব, ভূত ও অতিথিদের সঙ্গে পিতৃতর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মার্কণ্ডেয় পুরাণ গ্রন্থে বলা হয়েছে, পিতৃগণ শ্রাদ্ধে তুষ্ট হলে স্বাস্থ্য, ধন, জ্ঞান ও দীর্ঘায়ু এবং পরিশেষে উত্তরপুরুষকে স্বর্গ ও মোক্ষ প্রদান করেন।
বাৎসরিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যাঁরা অপারগ, তাঁরা সর্বপিতৃ অমাবস্যা পালন করে পিতৃদায় থেকে মুক্ত হতে পারেন। শর্মার মতে, শ্রাদ্ধ বংশের প্রধান ধর্মানুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে পূর্ববর্তী তিন পুরুষের উদ্দেশ্যে পিণ্ড ও জল প্রদান করা হয়, তাঁদের নাম উচ্চারণ করা হয় এবং গোত্রের পিতাকে স্মরণ করা হয়। এই কারণে একজন ব্যক্তির পক্ষে বংশের ছয় প্রজন্মের নাম স্মরণ রাখা সম্ভব হয় এবং এর ফলে বংশের বন্ধন দৃঢ় হয়। ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতাত্ত্বিক উষা মেননের মতেও, পিতৃপক্ষ বংশের বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে। এই পক্ষে বংশের বর্তমান প্রজন্ম পূর্বপুরুষের নাম স্মরণ করে তাঁদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পিতৃপুরুষের ঋণ হিন্দুধর্মে পিতৃমাতৃঋণ অথবা গুরুঋণের সমান গুরুত্বপূর্ণ।
..তর্পণ বিধি..
স্নানাঙ্গ-তর্পণ স্নানান্তেই করিতে হয়। স্নানান্তে পূর্বমুখে নদীতে নাভিমাত্র জলে দাঁড়াইয়া, যজ্ঞোপবীত বাম স্কন্ধে রাখিয়া তিলক ধারণ করিবে।
তর্পণ শুরুতে আচমন ও বিষ্ণু স্মরণ।
করজোড়ে—ওঁ তদ্ বিষ্ণোঃ পরমং পদং, সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ।
দিবীব চক্ষুরা ততম্।। ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ,।
এই মন্ত্রে বিষ্ণুকে স্মরণ করিবেন। আচমন পূবর্বক তিনবার নমো বিষ্ণুঃ বলিধা করজোড়ে বলিবেন—
নমঃ অপিত্রোবা, সর্ববাবস্থাং গতোহপিবা।
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং, স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।
এই মন্ত্রে বিষ্ণু স্মরণ করিবেন।
।।তীর্থ- আবাহন মন্ত্র।।
যজ্ঞোপবীত ডান স্কন্ধে রাখিয়া দক্ষিণাভিমুখে করজোড়ে নিম্নলিখিত মন্ত্রে তীর্থ- আবাহন করিবেন।
ওঁ নমঃ কুরুক্ষেত্রং গয়া-গঙ্গা-প্রভাস-পুষ্করাণিচ ।
পুণ্যান্যেতানি তীর্থানি তর্পণ-কালে ভবন্তিহ ।।
।।দেব-তর্পণ।।
পূবর্বমুখে প্রথমে দেবতর্পণ করিতে হয়। যজ্ঞোপবীত বাম স্কন্ধে রাখিয়া বামহস্ত ও দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুলির করজোড়ে তাম্রকোষ ধরে তিল ও তুলসি সহযোগে নিম্নলিখিত মন্ত্রে প্রত্যেককে এক অঞ্জলি জল দিবেন।
সন্ধ্যা করিতে না পারিলে সবর্বশেষে সূর্য্যার্ঘ্য দিবেন।
দেব-তর্পণ—ওঁ ব্রহ্মা তৃপ্যতাম্।। ওঁ বিষ্ণুস্তৃপ্যতাম্।।
ওঁ রুদ্রস্তৃপ্যতাম্।। ওঁ প্রজাপতিস্তৃপ্যতাম্।
এরপরে নিম্নলিখিত ন্ত্র পড়িয়া পূবর্বদিকে মুখকরে এক অঞ্জলি জল তিল ও তুলসি সহযোগে প্রদান করবেন।
ওঁ নমঃ দেবা যক্ষাস্তথা নাগা, গন্ধবর্বাপ্সরসোহসুরাঃ।
ক্রুরাঃ সর্পাঃ সূপর্ণাশ্ঢ, তরবো জিহ্মগাঃ খগাঃ ।।
বিদ্যাধরা জলাধারা-স্তথৈবাকাশগামিনঃ ।
নিরাহারাশ্চ যে জীবাঃ পাপে-ধমের্ম রতাশ্চ যে ।
তেষাং আপ্যায়নায়ৈতৎ, দীয়তে সলিলং ময়া ।।
বাংলা অনুবাদ—দেব, যক্ষ, নাগ, গন্ধবর্ব, অপ্সরা, অসুর, ক্রুরস্বভাব জন্তু, সর্প, সুপর্ণ ( গরুড়জাতীয় পক্ষী ), বৃক্ষ, সরীসৃপ, সাধারন পক্ষী, বিদ্যাধর ( কিন্নর), জলচর, খেচর, নিরাহার (ভূতাদি ) এবং পাপে ও ধর্মকার্য্যেরত যত জীব আছে, তাহাদের তৃপ্তির জন্য আমি এই জল দিতেছি ।
।। মনুষ্য-তর্পণ।।
দক্ষিণাবর্তে ( ডানদিকে ঘুরিয়া ) , উত্তরপশ্চিম মুখে (বায়ুকোণে ) নিবীত হইয়া (যজ্ঞোপবীত মালার ন্যায় ঝুলাইয়া ) নিম্নলিখিত মন্ত দুইবার পাঠকরিয়া দুই অঞ্জলি তিল ও তুলসিযুক্ত জল দিবেন ।
ওঁ নমঃ সনকশ্চ সনন্দশ্চ, তৃতীয়শ্চ সনাতনঃ .
কপিলশ্চাসুরিশ্চৈব, বোঢ়ুঃ পঞ্চশিখস্তথা ।
সর্বেব তে তৃপ্তিমায়ান্তু, মদ্দত্তে-নাম্বুদা সদা ।।
বাংলা অনুবাদ—সনক, সনন্দ, সনাতন, কপিল,আসুরি, বোঢ়ু ও পঞ্চশিখ প্রভৃতি সকলে মদ্দত্ত জলে সর্বদা তৃপ্তিলাভ করুন।
।। ঋষি-তর্পণ।।
এরপরে দক্ষিণাভিমুখে পুনরায় পূ্র্ববাস্য হইয়া উপবীতী অবস্থায় দৈবতীর্থ দ্বারা প্রত্যেককে এক অঞ্জলি তিল-তুলসি যুক্ত জল দিবেন।
ওঁ মরীচিস্তৃপ্যতাং, ওঁ অত্রিস্তৃপ্যতাং, ওঁ অঙ্গিরাস্তৃপ্যতাং, ওঁ পুলস্তস্তৃপ্যতাং,
ওঁ পুলহস্তৃপ্যতাং, ওঁ ক্রুতুস্তৃপ্যতাং, ওঁ প্রচেতাস্তৃপ্যতাং, ওঁ বশিষ্ঠস্তৃপ্যতাং,
ওঁ ভৃগুস্তৃপ্যতাং, ওঁ নারদস্তৃপ্যতাং।
।। দিব্য-পিতৃ-তর্পণ।।
বামদিকে ঘুরিয়া দক্ষিণ মুখে, পৈতা দক্ষিণ স্কন্ধে লইয়া নিম্নোক্ত সাতটি মন্ত্র পড়ায়া প্রত্যেককে এক অঞ্জলি সতিল জল দিবেন ।
1। ওঁ অগ্নিষ্বত্তাঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা- মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।
2। ওঁ সৌম্যাঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা- মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।
3। ওঁ হবিষ্মন্তঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা- মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।
4। ওঁ উষ্মপাঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা- মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।
5। ওঁ সুকালিনঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা- মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।
6। ওঁ বর্হিষদঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা- মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।
7। ওঁ আজ্যপাঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা- মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।
।।যম- তর্পণ।।
নিম্নলিখিত মন্ত্রস্থ নামগুলির প্রত্যেকের যথাক্রমে পিতৃতীর্থদ্বারা দক্ষিণ-মুখে প্রাচীনাবীতি হইয়া ওঁ যমায় নমঃ বলিয়া এইভাবে তিন অঞ্জলি করিয়া স-তিল জল দিবেন ।—
ওঁ নমঃ যমায় ধর্ম্মরাজায়, মৃত্যবে চান্তকায় চ, বৈবস্বতায় কালায়, সর্ব্বভূতক্ষয়ায় চ ।
ঔডুম্বরায় দধ্নায়, নীলায় পরমেষ্ঠিনে, বৃকোদরায় চিত্রায়, চিত্রগুপ্তায় বৈ নমঃ ।।
।। পিতৃ- আবাহন।।
তর্পণ সমাপ্তি পর্য্যন্ত দক্ষিণ মুখে প্রাচীনাবীতী অবস্থায় পরম ভক্তিসহকারে করপুটে বলিবেন –
ওঁ আগচ্ছন্তু মে পিতরঃ ইমং গৃহ্ণন্ত্বপোহঞ্জলিং । ( গৃহ্ণন্তু অপঃ অঞ্জলিং )
বাংলা অনুবাদ– হে আমার পিতৃগণ ( পূর্ব্বপুরুযগণ ) আসুন, এই অঞ্জলি পরিমিত জল গ্রহণ করুন।
———
আবাহনের পরে পিতৃতীর্থযোগে নিম্নলিখিত প্রকারে গৌত্র, সম্বন্ধ ও নাম উল্লেখ করতঃ ভক্তিসহকারে পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতামহ, প্রমাতামহ, বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহী, এই নয়জনের প্রত্যেককে তিন অঞ্জলি করিয়া সতিল জল দিবেন, মন্ত্রও যথাক্রমে তিনবার পিঠ করিবেন ।
পরে মাতামহী, প্রমাতামহী, বৃদ্ধপ্রমাতামহী, প্রভৃতিকে এক এক অঞ্জলি জল দিয়া, গুরু, জ্যেঠা, খুড়া, বিমাতা, ভ্রাতা, ভগ্নী, জ্যেঠী, খুড়ী, পিসি,মাসী, মাতুল, মাতুলানী, শ্বশুর, শাশুড়ী, ভগ্নিপতি, জ্ঞাতি, প্রভৃতি প্রত্যেককে এক অঞ্জলি সতিল-জল ।
গঙ্গাজলে তর্পণ করিলে ‘’ এতৎ সতিল-গঙ্গোদকং’’ বলিবেন নচেৎ সতিলোদকং বলিতে হইবে ।
বিষ্ণুরোঁ অমুক গোত্রঃ পিতা অমুক দেবশর্ম্মা তৃপ্যতামেতৎ সতিলগঙ্গোদকং তস্মৈ স্বধা।
” ” ” পিতামহ ” ” ” ” ” ”
” ” ” প্রপিতামহ ” ” ” ” ” ”
” ” ” মাতামহ ” ” ” ” ” ”
” ” ” প্রমাতামহ ” ” ” ” ” ”
” ” ” বৃদ্ধপ্রমাতামহ ” ” ” ” ” ”
” ” গোত্রা মাতা অমুকী দেবী ” ” ” ”
” ” ” পিতামহী ” ” ” ” ” ”
” ” ” প্রপিতামহী ” ” ” ” ” ”
” ” ” মাতামহী ” ” ” ” ” ”
” ” ” প্রমাতামহী ” ” ” ” ” ”
” ” ” বৃদ্ধপ্রমাতামহী ” ” ” ” ” ”
বিশেষ উল্লেখযোগ্য এই যে উপরি লিখিত দ্বাদশ জনের কেহ জীবিত থাকিলে তাঁহাকে বাদদিয়ে তৎ-ঊর্দ্ধ্ব্রতন ব্যক্তিকে ধরিয়া দ্বাদশ সংখ্যা পূরণ করিতে হইবে ।
অতঃপর নিম্নলিখিত মন্ত্র পাঠ পূর্ব্বক অঞ্জলিত্রয় সতিল জল, জলাভাবে একবার মাত্র সতিল জল দিবেন, যথা– ওঁ নমঃ অগ্নিদদগ্ধাশ্চ যে জীবা, যেহপ্যদগ্ধাঃ কুলে মম ।
ভূমৌ দত্তেন তৃপ্যন্তু, তৃপ্তা যান্ত পরাং গতিং ।।
বাংলা অনুবাদ– আমার বংশে যে সকল জীব অগ্নিদ্বারা দগ্ধ হইয়াছেন, ( অর্থাৎ যাঁহাদের দাহাদি সংস্কার হইয়াছে ) এবং যাঁহারা দগ্ধ হন নাই ( অর্থাৎ কেহই তাঁহাদের দাহাদি-সংস্কার কার্য্য করেনাই ) তাঁহারা তৃপ্ত হউন ও স্বর্গ লাভ করুন ।
ওঁ নমঃ যে বান্ধবা অবান্ধবা বা, যে অন্য জন্মনি বান্ধবাঃ ।
তে তৃপ্তিং অখিলাং যান্ত, যে চ অস্মৎ তোয়-কাঙ্খিণঃ ।।
বাংলা অনুবাদ–যাঁহারা আমাদের বন্ধু ছিলেন, এবং যাঁহারা বন্ধু নহেন, যাঁহারা জন্ম-জন্মান্তরের আমাদিগের বন্ধু ছিলেন, এবং যাঁহারা আমাদের নিকট হইতে জলের প্রতাশা করেন , তাঁহারা সম্পূর্ণরূপে তৃপ্তিলাভ করুন ।
।। ভীষ্ম- তর্পণ।।
ইহা ‘’পিতৃ- তর্পণের ‘’ পরে করিবেন এবং পরে কৃতাঞ্জলি হইয়ি প্রার্থনা করিবেন। যথা—
ওঁ নমঃ বৈয়াঘ্রপদ্য- গোত্রায়, সাঙ্কৃতিপ্রবরায় চ ।
অপুত্রায় দদাম্যেতৎ সলিলং ভীষ্মবর্ম্মণে ।।
এই মন্ত্র পাঠ করিয়া উক্তরূপে এক অঞ্জলি সতিল- গঙ্গোদক দিবেন এবং পরে কৃতাঞ্জলি হইয়া প্রার্থনা করিবেন । যথা— ওঁ নমঃ ভীষ্মঃ শান্তনবো বীরঃ , সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়ঃ ।
আভিরদ্ভি- রবাপ্নোতু, পুত্র-পৌত্রৌচিতাং ক্রিয়াং ।।
বাংলা অনুবাদ— বৈয়াঘ্রপদ্য যাঁহার গোত্র,সাঙ্কৃতি যাঁহার প্রবর, সেই অপুত্রক ভীষ্মবর্ম্মাকে এই জল দিতেছি।
শান্তনু-তনয় বীর, সত্যবাদী, জিতেন্দ্রিয় ভীষ্মবর্ম্মা এই জল দ্বারা পুত্র-পৌত্রচিত তর্পণাদি-ক্রিয়া-জনিত তৃপ্তি লাভ করুন ।
।। রাম-তর্পণ ।।
সম্পূর্ণ তর্পণে অশক্ত হইলে , এই তর্পণ করতে হয় । বনবাসকালে শ্রীরামচন্দ্র এই মন্ত্রে তর্পণ করিতেন ।
তিনবার জল দিবেন, গঙ্গাজলে তর্পণ করিলে তোয়েন স্থলে গঙ্গোদকং বলিবেন । এর পরে এই মন্ত্র —
ওঁ নমঃ আ-ব্রহ্মভুবনাল্লোকা, দেবর্ষি-পিতৃ-মানবাঃ ,
তৃপ্যন্তু পিতরঃ সর্ব্বে , মাতৃ-মাতামহাদয়ঃ ।
অতীত-কুলকোটীনাং, সপ্তদ্বীপ-নিবাসিনাং ।
ময়া দত্তেন তোয়েন, তৃপ্যন্তু ভুবনত্রয়ং ।।
বাংলা অনুবাদ– ব্রহ্মলোক অবধি যাবতীয় লোক সমীপে অবস্থিত জীবগণ , ( যক্ষ, নাগাদি ) , দেবগণ, ( ব্রহ্মা , বিষ্ণু, শিব প্রভৃতি ) , ঋষিগণ ( মরীঢি, অত্রি, অঙ্গিরাদি ), পিতৃগণ ( দিব্য- পিতৃগণ অর্থাৎ অগ্নিষ্বাত্তাদি ), মনুষ্যগণ ( সনক, সনন্দ প্রভৃতি ), পিতৃ-পিতামহাদি এবং মাতামহাদি সকলে তৃপ্ত হউন ।
আমার কেবল এক জন্মের নহে এবং কেবল আমারও নহে , আমার বহুকোটিকুল, বহু জন্মান্তরে গত হইয়াছেন, সেই সেই কুলের পিতৃ-পিতামহাদি , ও সপ্তদ্বীপবাসী ( জম্বু, প্লক্ষ, শাল্মলি, কুশ, ক্রৌঞ্চ, শাক, পুষ্কর, এই সপ্তদ্বীপ ) সমুদয় মানবগণের পিতৃ-পিতামহাদি এবং ত্রিভুবনের যাবতীয় পদার্থ ( স্থাবর-জঙ্গমাদি ) আমার প্রদত্ত জলে তৃপ্ত হউক ।
।। লক্ষণ-তর্পণ ।।
রাম-তর্পণেও অশক্ত হইলে সকলে এই তর্পণ করিবেন, কারণ বনবাসকালে রাম ও সীতার শুশ্রূষায় নিযুক্ত থাকায় সময়াভাবে, লক্ষণ এই বলিয়া তর্পণ করিতেন । তিনবার সতিল জল দিলেই হবে ।
বলতে হবে—ওঁ নমঃ আব্রহ্মস্তস্বপর্য্যন্তং জগৎ তৃপ্যতু ।
বাংলা আনুবাদ—ব্রহ্মা হইতে তৃণ পর্ষ্যন্ত জগৎ , জগতের লোকে, স্থাবর জঙ্গমাদি, সকলে তৃপ্ত হউক ।
।। বস্ত্র-নিষ্পীড়নোদক ।।
স্নানের পরে বস্ত্র নিংড়ানো জল পয়ে দিতে নাই, যেহেতু বস্ত্র নিংড়ানো জলে যাঁহাদের কেহ কোথাও নাই তাঁহাদের তর্পণ করিতে হয়।
যথা—ওঁ নমঃ যে চাস্মাকং কুলে জাতা, অপুত্রা-গোত্রিণো মৃতাঃ ।
তে তৃপ্যন্তু ময়া দত্তং, বস্ত্র-নিষ্পীড়নোদকং ।।
বাংলা অনুবাদ—যাঁহারা আমাদের বংশে জন্মিয়া পুত্রহীন ও বংশহীন হইয়া গত হইয়াছেন, তাঁহারা মদ্দত্ত বস্ত্র-নিংড়ানো জলে তৃপ্ত হউন ।
উপরোক্ত মন্ত্র পাঠ করিয়া জল হইতে তীরে উঠিয়া স্থলে একবার মাত্র বস্ত্র নিংড়ানো জল দিবেন ।
।। পিতৃস্তুতি ।।
ওঁ নমঃ পিতা-স্বর্গঃ পিতা-ধর্ম্মঃ, পিতাহি পরমং তপঃ ।
পিতরি প্রীতি-মাপন্নে, প্রীয়ন্তে সর্ব্ব-দেবতা ।।
বাংলা অনুবাদ—(স্তুতি) পিতাই স্বর্গ, পিতাই ধর্ম্ম, পিতাই পরম তপস্যা (অর্থাৎ পিতা সেবাই তপস্যা ) পিতা প্রসন্ন হইলে সকল দেবতাই প্রীত হন ।
।। পিতৃপ্রণাম ।।
ওঁ নমঃ পিতৃন্নমস্যে দিবি যে চ মূর্ত্তাঃ,
স্বধাভুজঃ কাম্যফলাভিসন্ধৌ ।
প্রদানশক্তাঃ সকলেপ্সিতানাং, বিমুক্তিদা যেহনভিসংহাতেষু ।।
বাংলা অনুবাদ—যাঁহারা স্বর্গে মূর্ত্তি ধারণ করিয়া বিরাজ করিতেছেন, যাঁহারা শ্রাদ্ধান্ন ভোজন করেন, অভীষ্ট-ফলের কামনা করিলে যাঁহারা সকল বাঞ্ছিত-ফল দান করিতে সমর্থ এবং কোন ফলের কামনা না করিলে যাঁহারা মুক্তি প্রদান করেন , সেই পিতৃগণকে প্রণাম করি ।
।। সূর্য্যার্ঘ্য ।।
সূর্য্যদেবের উদ্দেশে পূর্ব্বদিকে মুখ করে একবার জল দিবেন ।
ওঁ নমো বিবস্বতে ব্রহ্মণ, ভাস্বতে বিষ্ণু তেজসে ।
জগৎসবিত্রে শুচয়ে, সবিত্রে কর্ম্মদায়িণে, ইদমর্ঘ্যং ওঁ শ্রীসূর্য্যায় নমঃ ।।
বাংলা অনুবাদ– হে পরম ব্রহ্মস্বরূপ সবিত্রিদেব ! আপনি তেজস্বী, দীপ্তিমান ; বিশ্বব্যাপী তেজের আধার, জগতের কর্ত্তা, পবিত্র, কর্ম্মপ্রবর্ত্তক; আপনাকে প্রণাম করি ।।
।। সূর্য্য-প্রণাম ।।
ওঁ নমঃ জবাকুসুম-সংঙ্কাশং, কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং ।
ধ্বান্তারিং সর্ব্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরং ।।
বাংলা অনুবাদ—জবাফুলের ন্যায় রক্তবর্ণ, কশ্যপের পুত্র, অতিশয় দীপ্তশালী, তমোনাশী, সর্ব্বপাপ নাশকারী দিবাকরকে প্রণাম করি ।।
।। অচ্ছিদ্রাবধারণ ।।
অর্থাৎ যে কর্ম্ম করা হইল, তাহা যে অচ্ছিদ্র অর্থাৎ ছিদ্রহীন, নির্দোষ হইল সেই বিষয়ে অবধারণ করাকে ( নিশ্চয় করাকে ) অচ্ছিদ্রাবধারণ বলে । সুতরাং করজোড়ে বলিবেন—
ওঁ কৃতৈতৎ তর্পণকর্ম্মাচ্ছিদ্রমস্তু।।
।। বৈগুণ্য-সমাধান ।।
অচ্ছিদ্রাবধারণের পরে বৈগুণ্য-সমাধান করিতে হয় । বামহস্তে সংযুক্ত দক্ষণ হস্তে জল, হরীতকী, কুশ স্পর্শ করিধা ( নদীতে তর্পণ করিলে, কেবল জল স্পর্শ করিবেন ), তারপরে বলিবেন—
বিষ্ণুরোঁ তৎসৎ অদ্য অমুক মাসে অমুক পক্ষে অমুক তিথৌ অমুক গৌত্রঃ শ্রী অমুক দেবশর্ম্মা কৃতেহহস্মিন্ তর্পণকর্ম্মণিষদ্বৈগুণ্যং জাতং তদ্দোষ প্রশমনায় শ্রীবিষ্ণু স্মরণষ্মহং করিষ্যে । এরপরে নিচের মন্ত্র দশবার জপ করবেন—-
ওঁ তদ্ বিষ্ণোঃ পরমং পদং, সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ । দিবীব চক্ষুরাততং । ওঁ বিষ্ণুঃ , ওঁ বিষ্ণুঃ , ওঁ বিষ্ণুঃ বলিধা দশবার জপ করিবেন ।
....................................
x

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Top Ad

Your Ad Spot