শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে হয় লোটনষষ্ঠী। সন্তানের মঙ্গলকামনায় পালন করে লোটন বা লুণ্ঠনষষ্ঠী ব্রত। এই ব্রত পালনে মায়েরা পুত্রশোক পায়না। সেইসাথে সংসার সুখকর হয়ে ওঠে। গর্ভবতী মহিলা হলেও এটি করা যায়। তবে কোনো বন্ধ্যা বা সন্তান উৎপাদনে অক্ষম মহিলা কিংবা বিধবা মহিলাদের এই লৌকিক উপচার পালন করার বিধান নেই। যেকোনো পুত্রবতী সধবা মহিলাদের একান্ত উৎসব এটি। নিজে অথবা পুরোহিত ডেকে পূজো করাতে হয়। কোনো কারণে দিনটি সোমবার, মঙ্গলবার, শুক্রবার কিংবা শনিবার পড়লে তবে সেদিন লোটনষষ্ঠীর পূজা করা যাবেনা। শুধুমাত্র নিয়মটুকু মেনে চলতে হবে।
ব্রতের দ্রব্য ও বিধান— ব্রত পালনের উপকরণ হিসাবে লাগে ঘি, ঝিঙে, কড়াই, আখের গুড়, ফল, ডাব, মিষ্টি। পুরোহিতকে দিয়ে ব্রতের পূজা করাতে হয়। পূজার দিন অন্নভোজন করতে নেই। তবে দিনের বেলায় লুচি, তরকারি, মিষ্টি ও রাত্রিতে ফল, মিষ্টি, ডাব খাওয়া যেতে পারে। কেবলমাত্র সন্তানবতী মহিলারাই এই ব্রত পালন করতে পারেন।
ব্রতের ফল— এই ব্রত পালন করলে পুত্র-কন্যাদের অকালমৃত্যু হয় না
কাদম্বিনী সব জিনিস ভাল করে দেখে গোছাবার সময় দেখলেন, কৌটো থেকে তিনটি লোটন উধাও। তিনি তখনই বিমলীর পিসির কাছে গিয়ে বললেন, “আমার কৌটাতে তিনটি লোটন নেই, সেগুলি নিশ্চয়ই তুমি নিয়েছ, শীঘ্র ফেরত দাও।” কিন্তু বিমলীর পিসি জানালেন, তিনি লোটন চুরি করেননি। কাদম্বিনী কাঁদতে কাঁদতে মা ষষ্ঠীকে বললেন, “হে মা ষষ্ঠী! যে আমার সোনার লোটন চুরি করেছে, তাঁকে শাস্তি দাও।”
এই ঘটনার কিছু দিন পরেই বিমলীর পিসির তিন পুত্র একই সঙ্গে কঠিন অসুখে পড়ল। কারও আর বাঁচার আশা রইল না। বিমলীর পিসি কান্নাকাটি করতে লাগলেন। এর মধ্যেই একদিন বিমলীর পিসি স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নে মা ষষ্ঠী তাঁকে দেখা দিয়ে বললেন, “তুই কাদম্বিনীর কৌটো থেকে সোনার লোটন চুরি করেছিস।তাই তোর আজ এই অবস্থা। যদি ভাল চাস, তাড়াতাড়ি কাদম্বিনীর লোটনগুলি ফেরত দিয়ে আয়।তা না হলে তোর ভাল হবে না।”
এই স্বপ্ন দেখার পর বিমলীর পিসি খুব ভয় পেয়ে গেলেন। রাত শেষ হয়ে সকাল হতে না হতেই তিনি কাদম্বিনীর বাড়িতে গেলেন। কাদম্বিনীর কাছে নিজের দোষ স্বীকার করে নাকে খৎ দিয়ে লোটন তিনটি ফেরত দিয়ে দিলেন। কাদম্বিনী সব শুনে বললেন, “তুমি খুবই অন্যায় করেছিলে। মা ষষ্ঠীকে তুমি চেনো না। আর কখনও এমন কাজ করো না। এখন থেকে নিয়মিত মা ষষ্ঠীর ব্রত পালন করো। তা হলে তোমার ছেলেমেয়েরা ভাল থাকবে এবং সংসারে কোনও অভাব থাকবে না। এখন বাড়ি যাও তোমার সন্তানরা যাতে সুস্থ হয়ে ওঠে তার জন্য মায়ের কাছে প্রার্থনা করো।”
বিমলীর পিসি তখন কাদম্বিনীর কাছে ষষ্ঠী পূজার নিয়ম জানতে চান। কাদম্বিনী বললেন, “প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিন ষোলো মুথুনিতে বাঁশপাতা বেঁধে সেটি জলের মধ্যে পুঁতে দিতে হবে। আর যে ক’টি সন্তান থাকবে সেই কটি জালি ঝিঙে এবং কিছুটা কড়াই ভেজানো দিয়ে ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে মা ষষ্ঠীর পূজা করতে হবে। পূজার শেষে ব্রত কথা শুনে জল খেতে হবে। বিমলীর পিসি সব শুনে তখনই বাড়ি ফিরে গেলেন। বাড়ি ফিরে ঠাকুর ঘরে গিয়ে মাথা খুঁড়তে খুঁড়তে মা ষষ্ঠীকে বলতে লাগলেন, “হে মা ষষ্ঠী! আমার ছেলেদের বাঁচিয়ে দাও মা। এখন থেকে সারা জীবন ধরে আমি তোমার ব্রত পালন করব। আমার অপরাধ ক্ষমা করো মা।” মায়ের দয়ায় বিমলী পিসির ছেলেরা অল্প কয়েক দিনের মধ্যে সেরে উঠল। তখন থেকে মা ষষ্ঠীর মাহাত্ম্যের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। আর তখন থেকে সকলে নিজের নিজের পুত্র-কন্যার কল্যাণের কথা ভেবে লোটনষষ্ঠী ব্রত পালন করতে শুরু করল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন