শাস্ত্রে বলে -যে কার্যে পাপক্ষয় করিয়া অন্ধকারাচ্ছন্ন হৃদয়ে দিব্যজ্ঞানের আলো প্রজ্জলিত প্রকাশ করিয়া শ্রীগোবিন্দরুপ দর্শনের বা প্রাপ্তির সক্ষম করায় এবং সঞ্চিত পাপরাশি বিনাশ করায় তাহাই দীক্ষা ।
দীক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন :-
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কৃপা লাভের জন্যই দীক্ষা মন্ত্র গ্রহণের প্রয়োজন। বিধিমত দীক্ষা গ্রহণ না করিলে সাধন ভজন রাজ্যে প্রবেশ করা যায় না । দীক্ষা ব্যতীত গুরুর কৃপা হয় না,দীক্ষা ব্যতীত হরিনামাদি ভজনের দ্বারা শ্রেয়ঃলাভ হইলেও শ্রীকৃষ্ণের কৃপা ও সেবা লাভের ও অর্চ্চনাদি ভজনাঈের অধিকার হয় না এবং সাধন ভজন পথের শক্তি লাভ হয় না । সংসার বাসনা ক্ষয় হয় না, আর দীক্ষা মন্ত্র গ্রহণ না করিলে পরমাত্মার সহিত জীবাত্মার মিলনে সংযোগের কোন উপায়ও হয় না । জন্ম-মৃত্যু বারণ হয় না,কোন সৎকার্যের সিদ্ধি হয় না । কাজের অনিত্য দেহের নিত্যাত্মার মুক্তির সদ্গতির জন্য বিধি অনুসারে দীক্ষা গ্রহণ করিতে হয়। দীক্ষাতে দেহ শুদ্ধি হয়, সংসার বাসনা ক্ষয় হয়,মহৎ ব্যক্তির ও শ্রীকৃষ্ণের এবং শ্রীগুরু কৃপা লাভ হয়। সাধন ভজন ও অর্চ্চনাদি ভজনাঈের অধিকার জম্মে এবং সর্ব্বকার্য সিদ্ধি হয় কাজেই দীক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন । দীক্ষা গ্রহণ ব্যতীত সাধন সিদ্ধি হয় না।ধ্রুব প্রথমে দীক্ষা গ্রহণ ব্যতীত বৈকুণ্ঠেশ্বর শ্রীনারায়ণে ডাকা সত্বেও তাহার কৃপা লাভ করিতে পারে নাই । তৎপরে শ্রীনারদ ঋষি হইতে দীক্ষা গ্রহণ করিয়া ,তাহাকে ডাকিয়া তাহার কৃপা লাভ করেন। অর্থাৎ শ্রীনারায়ণের দর্শন লাভ করেন।
আমরা জন্ম গ্রহণ করিবার পর হইতে মায়া মোহে আকৃষ্ট হইয়া পূর্ব্ব বাক্য ভুলিয়া অজ্ঞানে অন্ধ থাকিয়া আছি। এই অনিত্য দেহের আত্মার ইহকালের ও পরকালের মুক্তির সদ্গতির উপায় স্বরুপ দীক্ষাগুরু কৃপা করিয়া দীক্ষামন্ত্র শ্রীকৃষ্ণের বীজ মন্ত্র দিয়া ,অজ্ঞানরুপ হৃদয় অন্ধকার দূর করিয়া জ্ঞানের আলো প্রজ্জ্বলিত করিয়া এই অপবিত্র দেহকে পবিত্র করিয়া শ্রীগোবিন্দরুপ দর্শন উপযোগী মন্ত্রাদি দেওয়ার জন্যই দীক্ষাগুরুর প্রয়োজন । তিনি শ্রীকৃষ্ণের কৃপা লাভের জন্য মন্ত্ররুপে আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাধন ভজন পথে প্রবেশ করা যায় না। কাজেই দীক্ষা গুরুর প্রয়োজন।
গুরু তত্ত্ব :-
দীক্ষা গুরু শ্রীকৃষ্ণের নিত্যদাস ,গুরু শ্রীকৃষ্ণ নহে, দীক্ষাগুরু শ্রীকৃষ্ণের স্বরুপ অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের প্রকাশ বিশেষ। শাস্ত্রে বলে গুরু ও কৃষ্ণ অভেদ জনিবেন । এই ভেদ স্বরুপ নহে। শুদ্ধা জ্ঞাণী ভক্তগণ এই অভেদ ভাব শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তম রুপেই মনে করিয়া থাকেন। গুরু স্বরুপত শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তম দাস ভক্ত। শিষ্য দীক্ষাগুরুকে শ্রীকৃষ্ণ জ্ঞানে পূজার্চ্চনাদি করিবেন ।শ্রীগুরু ও শ্রীকৃষ্ণ এক নহে, কারণ গুরু বীজ ,গুরু মন্ত্র ও গুরু ধ্যানাদি শ্রীকৃষ্ণের মন্ত্র ও ধ্যানাদি হইতে ভিন্ন রুপ শ্রীগুরুদেব ভগবত রাজ্যের আশ্রিত ব্যক্তির ভবপারের একমাত্র এাণকারী বলিয়া দীক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন।
দীক্ষা প্রধানতঃ দশ প্রকার :-
যথা —
১)স্মার্তী, ২) মানসী,৩) যৌগী , ৪) চাক্ষুষী , ৫) স্পর্শিনী , ৬) বাচিকী , ৭) মান্ত্রিকী, ৮) হৌত্রী,
৯) শাস্ত্রী ও ১০) আভিষেচিকী।
১) স্মার্তী দীক্ষা--- সমর্থ গুরু বিদেশস্থ শিষ্যকে স্মরণ করে ক্রমশঃ তার আণবমল, কর্মমল ও মায়িক মলের আবরণকে বিশ্লিষ্ট অর্থাৎ চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলেন এবং লয়যোগাঙ্গবিধানে তাকে পরম শিবে যোজনা করেন।
২) মানসী দীক্ষা--- শিষ্যকে নিজের কাছে বসিয়ে অন্তঃদৃষ্টিতে তার মলত্রয়কে অবলোকন করে, সেই মলত্রয়কে নিশ্চিহ্নকরণ।
৩) যৌগী দীক্ষা--- যোগোক্ত ক্রমে গুরু শিষ্য দেহে প্রবিষ্ট হয়ে তার আত্মাকে নিজের আত্মাতে যুক্ত করেন। তার নাম যৌগদীক্ষা।
৪) চাক্ষুষী দীক্ষা--- শিবোহহং ভাবে সমাবিষ্ট হয়ে গুরু করুণাদৃষ্টিতে শিষ্যকে নির্ণিমেষ নেত্রে দেখতে থাকেন তাতেই শিষ্যের মধ্যে অকস্মাৎ শিবভাবের বোধন ঘটে যায়।
৫) স্পর্শিনী দীক্ষা--- গুরু স্বয়ং পরমশিবভাবে ভাবিত হয়ে সমাধিস্থ হয়ে পড়েন । সেই সময় তাঁর হস্তই শিবহস্ত, তাঁর মুখই শিববক্ত্র । আনন্দ জ্যোতিতে উদ্ভাসিত গুরু শিষ্যের উপযোগী বীজমন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে তাঁর শিবহস্ত শিষ্যের মাথায় অর্পণ করেন । সঙ্গে সঙ্গে নাদ ও জ্যোতি প্রকট হয়ে যায় ।
৬) বাচিকী দীক্ষা--- গুরু তাঁর গুরুভাবে ভাবিত হয়ে নিজ দেহে স্বীয় গুরুশক্তির আবেশ ঘটান। নিজের বক্ত্রকে তখন গুরুবক্ত্ররূপে অনুভব করে শ্রদ্ধাপ্লুত অবস্থায় শিষ্যের নিকট দিব্যমন্ত্র প্রকট করে থাকেন। সেই সদ্যপ্রকটিত মন্ত্রের উপযোগী মুদ্রান্যাসাদি সাধন প্রণালীও শিখিয়ে দেন।
৭) মান্ত্রিকী দীক্ষা---এই দীক্ষায় গুরু মন্ত্রন্যাস যুক্ত অবস্থায় স্বয়ং মন্ত্রতনু হয়ে শিষ্যকে মন্ত্রদান করে থাকেন। গুরু যে মন্ত্রতনু হলেন তা শিষ্য এই দেখে বুঝতে পারেন যে গুরুর ললাটে কিংবা বক্ষস্থলে শিষ্যের বীজ অত্যাশ্চর্য উপায় যেন খোদিত হয়ে জ্বলজ্বল করছে ।
৮) হৌত্রী দীক্ষা--- গুরুকুণ্ডে বা স্থণ্ডিলে অগ্নিস্থাপন করে লয়যোগের ক্রমে শিষ্যকে দিয়ে প্রসিদ্ধ বেদমন্ত্রে ক্রমাগত আহুতি দেওয়াতে থাকেন। তাঁর সংকল্প থাকে শিষ্যের মলশুদ্ধি ও পাশ মুক্তি। বেদমন্ত্র হল--- "ওঁ অগ্নিং দূতং বৃনীমহে হোতারং বিশ্ববেদসং অস্য যঞ্জস্য সুক্রতুম।।" হোম করতে করতে শিষ্য প্রথমে খুব জ্বলন বা তাপ অনুভব করেন। এই যঞ্জাগ্নির তাপে শিষ্যের দেহাবস্থিত পাশ সমূহ দগ্ধীভূত হয়। তারপর শান্ত স্নিগ্ধ শীতলতার আবির্ভাব হয়। সেই স্নিগ্ধ অমৃতরসে শিষ্যের সকল সত্তা আপ্লাবিত হয়ে যায়।
৯) শাস্ত্রী দীক্ষা--- গুরু তাঁর যোগ্য শুশ্রূষু ভক্তকে যে সাধনায় সিদ্ধ করতে চান কিংবা যে তত্ত্ব তিনি তার মধ্যে প্রকট করতে চান, সেই তত্ত্ব বিষয়ক বা সাধনা বিষয়ক গ্রন্থ শিষ্যের হাতে দিয়ে আশীর্বাদ করেন। তাঁর আশীর্বাদের ফলে সেই তত্ত্ব বা সাধন রহস্য শিষ্যের অধিগত হয়ে যায়।
১০) আভিষেচিকী দীক্ষা---এই দীক্ষার অপর নাম শিবকুম্ভভিষেক দীক্ষা। সাধারণতঃ একটি কুম্ভে শিব ও শিবানীকে পূজা করে শিষ্যকে মন্ত্রদান করা হয়। সাধারণ তন্ত্র গ্রন্থে এই বিধান। কিন্তু শৈবাগমের ঋষিদের মতে, শিষ্যকে গন্ধপুষ্পাদি দ্বারা পূজা করে স্বয়ং গুরু তার দেহরূপ ঘটে আপন তপঃশক্তির বলে শিব ও শিবানীর আবেশ সঞ্চার করে দেন। সেটাই যথার্থ আভিষেচিকী দীক্ষা। অন্তররাজ্যে প্রবেশ করার জন্য গুরু কর্তৃক শিষ্যের এই হল -অভিষেক ক্রিয়া।
যথা —
১)স্মার্তী, ২) মানসী,৩) যৌগী , ৪) চাক্ষুষী , ৫) স্পর্শিনী , ৬) বাচিকী , ৭) মান্ত্রিকী, ৮) হৌত্রী,
৯) শাস্ত্রী ও ১০) আভিষেচিকী।
১) স্মার্তী দীক্ষা--- সমর্থ গুরু বিদেশস্থ শিষ্যকে স্মরণ করে ক্রমশঃ তার আণবমল, কর্মমল ও মায়িক মলের আবরণকে বিশ্লিষ্ট অর্থাৎ চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলেন এবং লয়যোগাঙ্গবিধানে তাকে পরম শিবে যোজনা করেন।
২) মানসী দীক্ষা--- শিষ্যকে নিজের কাছে বসিয়ে অন্তঃদৃষ্টিতে তার মলত্রয়কে অবলোকন করে, সেই মলত্রয়কে নিশ্চিহ্নকরণ।
৩) যৌগী দীক্ষা--- যোগোক্ত ক্রমে গুরু শিষ্য দেহে প্রবিষ্ট হয়ে তার আত্মাকে নিজের আত্মাতে যুক্ত করেন। তার নাম যৌগদীক্ষা।
৪) চাক্ষুষী দীক্ষা--- শিবোহহং ভাবে সমাবিষ্ট হয়ে গুরু করুণাদৃষ্টিতে শিষ্যকে নির্ণিমেষ নেত্রে দেখতে থাকেন তাতেই শিষ্যের মধ্যে অকস্মাৎ শিবভাবের বোধন ঘটে যায়।
৫) স্পর্শিনী দীক্ষা--- গুরু স্বয়ং পরমশিবভাবে ভাবিত হয়ে সমাধিস্থ হয়ে পড়েন । সেই সময় তাঁর হস্তই শিবহস্ত, তাঁর মুখই শিববক্ত্র । আনন্দ জ্যোতিতে উদ্ভাসিত গুরু শিষ্যের উপযোগী বীজমন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে তাঁর শিবহস্ত শিষ্যের মাথায় অর্পণ করেন । সঙ্গে সঙ্গে নাদ ও জ্যোতি প্রকট হয়ে যায় ।
৬) বাচিকী দীক্ষা--- গুরু তাঁর গুরুভাবে ভাবিত হয়ে নিজ দেহে স্বীয় গুরুশক্তির আবেশ ঘটান। নিজের বক্ত্রকে তখন গুরুবক্ত্ররূপে অনুভব করে শ্রদ্ধাপ্লুত অবস্থায় শিষ্যের নিকট দিব্যমন্ত্র প্রকট করে থাকেন। সেই সদ্যপ্রকটিত মন্ত্রের উপযোগী মুদ্রান্যাসাদি সাধন প্রণালীও শিখিয়ে দেন।
৭) মান্ত্রিকী দীক্ষা---এই দীক্ষায় গুরু মন্ত্রন্যাস যুক্ত অবস্থায় স্বয়ং মন্ত্রতনু হয়ে শিষ্যকে মন্ত্রদান করে থাকেন। গুরু যে মন্ত্রতনু হলেন তা শিষ্য এই দেখে বুঝতে পারেন যে গুরুর ললাটে কিংবা বক্ষস্থলে শিষ্যের বীজ অত্যাশ্চর্য উপায় যেন খোদিত হয়ে জ্বলজ্বল করছে ।
৮) হৌত্রী দীক্ষা--- গুরুকুণ্ডে বা স্থণ্ডিলে অগ্নিস্থাপন করে লয়যোগের ক্রমে শিষ্যকে দিয়ে প্রসিদ্ধ বেদমন্ত্রে ক্রমাগত আহুতি দেওয়াতে থাকেন। তাঁর সংকল্প থাকে শিষ্যের মলশুদ্ধি ও পাশ মুক্তি। বেদমন্ত্র হল--- "ওঁ অগ্নিং দূতং বৃনীমহে হোতারং বিশ্ববেদসং অস্য যঞ্জস্য সুক্রতুম।।" হোম করতে করতে শিষ্য প্রথমে খুব জ্বলন বা তাপ অনুভব করেন। এই যঞ্জাগ্নির তাপে শিষ্যের দেহাবস্থিত পাশ সমূহ দগ্ধীভূত হয়। তারপর শান্ত স্নিগ্ধ শীতলতার আবির্ভাব হয়। সেই স্নিগ্ধ অমৃতরসে শিষ্যের সকল সত্তা আপ্লাবিত হয়ে যায়।
৯) শাস্ত্রী দীক্ষা--- গুরু তাঁর যোগ্য শুশ্রূষু ভক্তকে যে সাধনায় সিদ্ধ করতে চান কিংবা যে তত্ত্ব তিনি তার মধ্যে প্রকট করতে চান, সেই তত্ত্ব বিষয়ক বা সাধনা বিষয়ক গ্রন্থ শিষ্যের হাতে দিয়ে আশীর্বাদ করেন। তাঁর আশীর্বাদের ফলে সেই তত্ত্ব বা সাধন রহস্য শিষ্যের অধিগত হয়ে যায়।
১০) আভিষেচিকী দীক্ষা---এই দীক্ষার অপর নাম শিবকুম্ভভিষেক দীক্ষা। সাধারণতঃ একটি কুম্ভে শিব ও শিবানীকে পূজা করে শিষ্যকে মন্ত্রদান করা হয়। সাধারণ তন্ত্র গ্রন্থে এই বিধান। কিন্তু শৈবাগমের ঋষিদের মতে, শিষ্যকে গন্ধপুষ্পাদি দ্বারা পূজা করে স্বয়ং গুরু তার দেহরূপ ঘটে আপন তপঃশক্তির বলে শিব ও শিবানীর আবেশ সঞ্চার করে দেন। সেটাই যথার্থ আভিষেচিকী দীক্ষা। অন্তররাজ্যে প্রবেশ করার জন্য গুরু কর্তৃক শিষ্যের এই হল -অভিষেক ক্রিয়া।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন